ময়মনসিংহ মেডিক্যাল হাসপাতালে ফিল্ম সংকট

এক্স-রে ও সিটিস্ক্যান করাতে ভোগান্তির শিকার রোগীরা

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ফিল্ম সংকটের কারণে এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআইয়ের গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছেন না রোগীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা খরচ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে তাদের। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ফিল্ম সংকট থাকায় হাসপাতালে আসা সব রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না। প্রতিদিন যতটি ফিল্ম তাদের সরবরাহ করা হচ্ছে, ঠিক ততটি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর বাইরে করা যাচ্ছে না। এই সংকট কবে নাগাদ কাটবে তাও নিশ্চিত করে জানাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।

রোগীরা বলছেন, ফিল্ম সংকটের কথা বলে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে টাকা জমা দেওয়ার কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দিনের পর দিন ঘুরেও এসব পরীক্ষা করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।

মাঠে ধান কাটতে গিয়ে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়ে এই হাসপাতালে এসেছেন ঈশ্বরগঞ্জের মধুপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বারেক (৬০)। চিকিৎসককে দেখানোর পর পায়ের এক্স-রে করার পরামর্শ দেন। রেডিওলজি বিভাগে এক্স-রে করাতে টাকা জমা দেওয়ার জন্য কাউন্টারে এসে তিন দিন চেষ্টা করেও জমা দিতে পারেননি। গত বৃহস্পতিবার ফজরের নামাজের পর বাড়ি থেকে আবারও এসেছেন। দুই ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও টাকা জমা দিতে পারেননি। তখন বাজছিল সকাল ১০টা।

রেডিওলজি বিভাগে এক্স-রে করাতে টাকা জমা দেওয়ার জন্য কাউন্টারে এসে তিন দিন চেষ্টা করেও জমা দিতে পারেননি আব্দুল বারেক

দুর্ভোগের কথা জানিয়ে আব্দুল বারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত সোমবার আউটডোরে ডাক্তারকে দেখানোর পর পায়ের এক্স-রে করাতে বলেছেন। এরপর থেকে রেডিওলজি বিভাগের টিকিট কাউন্টারে তিন দিন লাইনে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করেও টাকা জমা দিতে পারিনি। বৃহস্পতিবার আবারও এসেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, আজও টাকা জমা দিতে পারবো কিনা জানি না। এই চার দিনে হাসপাতালে যাতায়াতে অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন এক্স-রে করাতে না পারলে চিকিৎসা হবে না। সকাল ৯টা থেকে এক্স-রে করানোর জন্য কাউন্টার খুলে আর দুপুর ১২টার আগে বন্ধ করে দেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর আর কারও টাকা জমা নেন না। এর মধ্যে কয়েকশ রোগী প্রতিদিন বাদ পড়ে যান। তাদের মধ্যে আমিও একজন ভোগান্তির শিকার।’ 

শুধু আব্দুল বারেক নন, প্রতিদিন কয়েকশ রোগী এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এ নিয়ে তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। 

এক্স-রে করাতে আসা কমলা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক্স-রে করানোর জন্য তিন দিন কাউন্টারে এসে টাকা জমা দিতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছি। সকাল সকাল কাউন্টারের সামনে এসে দেখি কয়েকশ লোকের ভিড়। ভিড়ের কারণে টাকা জমা দেওয়া আর সম্ভব হয় না। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ১২টার মধ্যে কাউন্টার বন্ধ করে চলে যান কর্মচারীরা। বলেন ফিল্ম শেষ। এভাবে প্রতিদিন অনেকে এক্স-রে করাতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন। এটি সবার জন্য ভোগান্তির। এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’

হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, এক্স-রে করাতে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী কাউন্টারের সামনে ভিড় করলেও ফিল্ম সরবরাহ আছে ২৫০টি। সিটিস্ক্যান ও এমআরআই করাতে দিনে প্রায় ৪০০ রোগী আসলেও ফিল্ম সরবরাহ আছে মাত্র ১০০টি। ফলে বাকি রোগীদের পরীক্ষা না করেই বাড়ি ফিরে যেতে হয়। গত এক বছর ধরে ফিল্ম সংকট চলছে। এতে সবার ভোগান্তি পোহাতে হয়।

রেডিওলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট বদরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফিল্ম সংকটের কারণে সব রোগীকে সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। ফিল্ম সরবরাহ বাড়ানো হলে রোগীদের চাহিদা মতো এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআই পরীক্ষা করানো যাবে। আমাদের কাছে ফিল্ম না থাকায় সব রোগীর পরীক্ষা করানো যাচ্ছে না।’

প্রতিদিন কয়েকশ রোগী এক্স-রে, সিটিস্ক্যান ও এমআরআইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন

হাসপাতাল সূত্র জানায়, রেডিওলজি বিভাগে এক্স-রে করাতে ২০০ টাকা লাগে। একই এক্স-রে বাইরের বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে গিয়ে করাতে লাগে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। এখানে সিটিস্ক্যান করাতে দুই থেকে সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা লাগে। একই সিটিস্ক্যান বাইরে থেকে করাতে লাগে সাত থেকে ১২ হাজার টাকা। এমআরআই পরীক্ষা করাতে তিন থেকে চার হাজার টাকা লাগে। আর বাইরে থেকে করাতে লাগে সাত থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাইরে আরও বেশিও দেওয়া লাগে।

ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহকারী অধ্যাপক চিকিৎসক সৈয়দ বদরুল আহসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংকটময় পরিস্থিতির কারণে ফিল্ম সংকটে পড়েছি আমরা। এ কারণে রোগীদের চাহিদা মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারছি না। তবে ফিল্ম সংকট কেটে গেলে সমস্যা থাকবে না। এই সংকট কবে নাগাদ কাটবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’