উল্লাপাড়ায় প্রকাশ্যে নৌকায় সিল, অধিকাংশ কেন্দ্রেই নেই বিএনপির এজেন্ট

sirajganj Sontala Tafsir Memorial High School-01(04-06-16)সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সলপ ইউনিয়নের বেশ কটি কেন্দ্রে ভোটারদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট নিয়ে নৌকার এজেন্টদের প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা গেছে। উপজেলার সলপ ইউনিয়নের খান সোনতলায় প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ.টি.ইমামের বাবার নামে প্রতিষ্ঠত সোনতলা তফসির মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের চারটি বুথের কোনোটিতেই ধানের শীষসহ নির্বাচনে অংশ নেওয়া চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর কোনও এজেন্ট পাওয়া যায়নি। শনিবার সকাল ৯টায় গিয়ে এমন চিত্র নজরে আসে। এ ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টার ছেলে তানভীর ইমামের পিএস ইঞ্জিয়ার শওকত হোসেন নৌকা প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।

কেন্দ্রের ২নং বুথে গিয়ে দেখা যায়, মোরগ প্রতীকের সদস্য প্রার্থীর এজেন্ট শহিদুল ইসলাম ভোটারদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল দিচ্ছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটাররা সিল সঠিকভাবে দিতে পারে না তাই সিল দিয়ে দিচ্ছি।

বুথের নৌকার এজেন্ট শাহাদত শেখ বলেন, সলপ ইউপি নির্বাচনে চার চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিলেও অন্য প্রার্থীর কোনও এজেন্ট বুথে আসেনি।

এই বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আনছার আলী বলেন, প্রকাশ্যে সিল মারতে নিষেধ করেছি। কিন্তু তারা শোনেনি।

১ নং বুথে গিয়ে দেখা যায় নৌকার এজেন্ট খন্দকার ওমর ফারুক ভোটারদের কাছ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যালট নিয়ে সিল দিচ্ছেন। সাংবাদিক বুথে প্রবেশ করায় অনেকটা বিব্রত হয়ে তিনি বলেন, কোথায় সিল দিতে হবে ভোটাররা বোঝে না তাই বুঝিয়ে দিচ্ছিলাম। এই বুথে আমি ছাড়া স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান পদের আরও একজন এজেন্ট আছে উনি বাইরে গিয়েছে।

বুথে কর্তব্যরত পোলিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রকাশ্যে ভোটের বিষয়টি আমি খেয়াল করিনি। বিষয়টি দেখছি।

৩ ও ৪ নং মহিলা বুথেও নৌকার এজেন্ট ছাড়া চেয়ারম্যান পদের অন্য কোনও এজেন্টদের পাওয়া যায়নি। ৩নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হেলালুজ্জামান ও ৪ নং বুথের সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে এ অবস্থাতেই ভোট হচ্ছে। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ও এলংজানী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আলম বলেন, অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে আসেনি। প্রকাশ্যে ভোটের বিষয়টি দেখছি।

এ ইউনিয়নের কানসোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও একই চিত্র। কেন্দ্রে ঢুকতেই ১নং বুথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শওকতের পক্ষে নৌকায় ভোট বুঝে নিচ্ছেন কানসোনা ঘোষপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নৌকার এজেন্ট গাজী বজলুর রশিদ। ধানের শীষের কোনও এজেন্ট নেই এখানে। জিজ্ঞাস করতেই বজলুর রশীদ হেসে বললেন বৃদ্ধ মানুষ, তাই উনাকে একটু সাহায্য করলাম।

ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, ভোট কেন্দ্রে এখন আর কারচুপির প্রয়োজন পড়ে না। সাধারণ মানুষও জেনে গেছে, এ সরকার আরও অনেক দিন অবস্থান করবে। তাই সরকারের লোকজনকে ভোট দিতে হবে। 

ইউনিয়নের মাঝামাঝিতে শত বছরের পুরাতন ঐতিহ্যবাহী সলপ হাইস্কুলের অবস্থাও প্রায় একই রকম। প্রায় প্রতিটি বুথেই নৌকার এজেন্টরা কৌশলে ও প্রকাশ্যে তাদের ভোট বুঝে নিচ্ছেন। বুথের মধ্যে একসঙ্গে ২/৩ জন করে ভোট দিতে দেখা গেছে। সাংবাদিকদের দেখে পুলিশ বেশ তৎপর হয়ে উঠলে সরকার দলীয় লোকজনের সঙ্গে পুলিশের ঠেলাঠেলি বাধে। নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনিছ আহম্মেদ বলেন, বড় সেন্টার, ভোটারও অনেক। তাই নিয়ন্ত্রণ করাটা একটু কঠিন। দায়িত্তপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং অফিসার মীর আব্দুল হান্নানের দাবি নির্বাচন তার কেন্দ্রে বেশ সুষ্ঠুই হচ্ছে।

আরও পড়ুন:
নোয়াখালীতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ভোট স্থগিত, বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন বর্জন

/বিটি/