রাজশাহীতে যানজটের অপর নাম অটোরিকশা

রাজশাহী মহানগরীতে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে যানজট। এতে করে নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তির মুখে। সেই সঙ্গে ট্রাফিক আইন না মানায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরীর কয়েকটি নির্ধারিত স্ট্যান্ড থেকে অটোরিকশাগুলো রাস্তায় যাতায়াত করলে অনেকটা যানজট থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে এমনটাই ধারণা করছেন নগরবাসী।Rajshahi-Auto-Ricksha-Jam-News-11
জানা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় চার লেনের ওপর চারটি সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশা। ফলে রাস্তা পারাপারে ভোগান্তির শেষ থাকে না। জিরোপয়েন্টের চার লেনের ওপর যাত্রী তোলার জন্য চারটি সারিতে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের পথ চলতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া যাত্রী তোলার জন্য রাস্তার সব জায়গায় দাঁড়ায় চালকরা। তারা ট্রাফিক আইন অমান্য করে যাত্রী তুলে।ফলে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে নগরীতে কয়েকমাসে অটোরিকশার ধাক্কায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

নগরীর উপশহর এলাকার মতিয়ুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন অটোরিকশাযাত্রী জানান, রাজশাহী সিটিতে অটোরিকশা একটা বিরক্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর জন্য জিরোপয়েন্ট থেকে সোনাদিঘি মোড় পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের পথ যেতে লাগে ২০ মিনিট। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, অটোরিকশার জন্য নগরে পা ফেলা দায় হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সিটি করপোরেশনকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, এক সময় রাজশাহীতে ঘোড়ার গাড়ি চলেছে। তখন নির্ধারিত এলাকা থেকে একটার পর একটা ঘোড়ার গাড়ি যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নেমেছে। তখন কোনও যানজট তৈরি হয়নি। আর এখন অটোরিকশা যেখান-সেখান থেকে দুই-তিনটা যাত্রী নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ছে। মনে হচ্ছে, নগরবাসীর চেয়ে অটোরিকশার সংখ্যায়ই বেশি।Rajshahi-Auto-Ricksha-Jam-2

রাজশাহী মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক বিভাগ) সহকারী কমিশনার ইবনে মিজান জানান,আমরা কাগজপত্রবিহীন অটোরিকশা ধরে ডাম্পিং স্টেশনে এনে রাখি। পরবর্তীতে অটোচালকরা সিটি করপোরেশন থেকে প্রত্যয়নপত্র কিংবা রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র এনে দিলে অটোরিকশাগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়।

বেসরকারিভাবে ১২ হাজারের মতো অটোরিকশা নগরীর রাস্তায় চলাচল করলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানিয়েছে, নগরীতে সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) রয়েছে ৮ হাজার ৮৬২টি ও দুই আসনবিশিষ্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ৫ হাজার ৪০০টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরপরও নগরীতে প্রতিদিন নতুন নতুন অটোরিকশা নামছে। লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ থাকা সত্ত্বেও নগরীর প্রায় ১০টি শো-রুমে প্রতিদিন অটোরিকশা বিক্রি হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অটোরিকশা শো-রুমের বিক্রেতারা জানান, শহরের বাইরে চলাচলের জন্য অটোরিকশা কিনে থাকেন ক্রেতারা। তারা যদি শহরে ওই রিকশা শহরের রাস্তায় নামায় তাহলে আমাদের করার কিছু নেই।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর জানান, নগরীতে রাজশাহীর অন্য উপজেলা থেকে অটোরিকশা প্রবেশ করে। এতে করে নির্ধারিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড করলেও লাভ হবে না।
আগে তাদেরকে শহরে প্রবেশ করতে বাধা দিতে হবে। তাহলে যানজট সহজেই দূর করা যাবে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ট্র্যাক্সেশন কর্মকর্তা (লাইসেন্স) সারোয়ার হোসেন খোকন বলেন, গত এক বছর ধরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ রয়েছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত পুরাতন অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুনভাবে নবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজারের মতো অটোরিকশা নবায়ন করা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, অটোরিকশা নিয়ে সব ধরনের জালিয়াতি বন্ধে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। একই নম্বর প্লেট নিয়ে ১০টির বেশি অটোরিকশা চলার কারণে ইতোমধ্যে ২০১৪ সালের পূর্বের সব লাইসেন্স বাতিল করে নতুনভাবে অটোরিকশা নবায়ন করা হচ্ছে। নতুন নম্বর দেওয়া হচ্ছে। স্টিকারও সিটি করপোরেশন থেকে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এমনভাবে স্টিকার কেটে রঙ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে যেন একই নম্বর প্লেট আর কেউ ব্যবহার করতে না পারে।

তিনি আরও বলেন, নানারকম প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন যানজট নিরসনে ও নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে।

/এআর/