জঙ্গি হাকিমের 'বহাল তবিয়ত' নিয়ে আক্ষেপ পায়েলের পরিবারের

পায়েল ও আবদুল হাকিম১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালানোর সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় বগুড়ার জঙ্গি খায়রুল ইসলাম পায়েল। আর পায়েলের সহপাঠী ও ‘বন্ধু’ জঙ্গি আবদুল হাকিম গত ৫ অক্টোবর বগুড়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। সরকার তাকে পুনর্বাসনের আশ্বাস দিয়েছে। তবে হাকিমের এই বহাল তবিয়তে থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পায়েলের পরিবার। পায়েলকে ‘পথ দেখিয়ে’ জঙ্গি বানানোর ‘মূল হোতা’ হাকিমের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন পায়েলের পরিবারের সদস্যরা। 

হলি আর্টিজানে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে দুজন খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বলের বাড়ি বগুড়ায়। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের কৃষক আবুল হোসেনের ছেলে খায়রুল ইসলাম পায়েল। আর ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি ইউনিয়নের বানিয়াজান গ্রামের কৃষক বদিউজ্জামানের ছেলে শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আর আত্মসমর্পণকারী জঙ্গি আবদুল হাকিম কামারপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে। আবদুল হাকিম ও পায়েল সহপাঠী ছিল।

গত ৪ জুলাই সরেজমিনে জঙ্গি পায়েলের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, সে স্থানীয় বৃ-কুষ্টিয়া দারুল হাদিস সালাফিয়া মাদ্রাসায় সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। এরপর পার্শ্ববর্তী বিহিগ্রাম ডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। ২০১৫ সালে সেখান থেকে আলিম পাশ করে। সহপাঠী ও বন্ধু পাশের কামারপাড়া গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে আবদুল হাকিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা বলে পায়েলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে পায়েল বাড়িতে খুব কম আসা যাওয়া করতো। পায়েলের বোন জোসনা তার লেখাপড়াসহ সব খরচ দিতেন। প্রায় ৬ মাস আগে বন্ধু হাকিমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাড়িতে এসেছিল। এরপর বাড়িতে আর কোনও যোগাযোগ করেনি।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বগুড়ার শাজাহানপুরের চোপীনগর ইউনিয়নের বৃ-কুষ্টিয়া গ্রামের আবুল হোসেনের স্ত্রী ও নিহত জঙ্গি পায়েলের মা পিয়ারা বেগম বলেন, ‘পুলিশ ও সাংবাদিকদের অনেক বলেছি, আমার ছেলে পায়েল সঙ্গ দোষে নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও তার লাশ নিয়ে আমরা বাড়ির পাশে দাফন করতে চাই। সবাই আশ্বাস দিলেও কেউ কথা রাখেননি। ছেলে জঙ্গি হয়ে অপরাধ করলেও আমাদের পরিবারেরতো কোনও দোষ নেই। তবে কেন শেষবারের মত মরা ছেলের মুখ দেখতে দেওয়া হলো না?’

তিনি অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর নামে যে ডেকে নিয়ে জঙ্গি বানালো, সেই বন্ধু আবদুল হাকিম আজ সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে। উল্টো তার ছেলের নামে দুর্নাম করেছে। তিনি আবদুল হাকিমের বিচার দাবি করে বলেন, ‘একদিন সত্য ঠিকই প্রকাশ হবে। আল্লাহ প্রকৃত অপরাধীর বিচার করবেন।’

তবে আবদুল হাকিমের মা সুফিয়া বেগম দাবি করেন, তার ছেলের সঙ্গে জঙ্গি পায়েলের কোনও সম্পর্ক ছিল না। আর গত ৫ অক্টোবর বগুড়া শহরে শহীদ টিটু মিলনায়তনে র‌্যাব ১২ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণের পর আবদুল হাকিম জানায়, ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহত জঙ্গি খায়রুল ইসলাম পায়েল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহপাঠী ছিল। পায়েলের প্ররোচনায় সে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়। পায়েল সম্পর্কে আরও অনেক তথ্য দেয় সে। ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন তাকে ৫ লাখ টাকার চেক প্রদান করেন।

তবে হাকিমের পরিবারের সদস্যরা জানান, আত্মসমর্পণের পর থেকে আজ পর্যন্ত আবদুল হাকিমকে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। সে কোথায় আছে তাও তার পরিবারের সদস্যরা জানেন না।

জঙ্গি আবদুল হাকিমের বড় ভাই আবদুল হালিম জানান, ‘পায়েল ও হাকিম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে ঢাকায় গিয়েছিল। ভর্তি হতে না পেরে হাকিম বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হয়েছিল। হাকিম গত ৩০ জুন আজারবাইজানে যাওয়ার চেষ্টা করলেও ভুয়া ভিসার কারণে যেতে ব্যর্থ হয়। এরপর সে ভুল বুঝতে পেরে আত্মসমর্পণ করে।’

তিনি আরও জানান, ‘হাকিমকে তাদের কাছে হস্তান্তর বা টাকার চেক দেওয়া হয়নি। ওইদিনই র‌্যাবের কর্মকর্তারা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। যাওয়ার আগে কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘হাকিমকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ ১০-১২ দিন আগে হাকিম ফোনে জানিয়েছে, সে ভালো আছে।’

আরও পড়ুন- 



পেট্রোল বোমাসহ চার হুজি সদস্য আটক

/এফএস/ এপিএইচ/