হাসপাতালের পরিচালক, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও পুলিশের সামনে ছাত্রলীগ কলেজ শাখার সভাপতি ইন্টার্ন চিকিৎসক আল-মামুন রাব্বী ও ছাত্রলীগ কর্মী কুতুব উদ্দিনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। রবিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ইন্টার্নিরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। জরুরি বিভাগ ও হাসপাতালের প্রধান ফটক বন্ধ করে রাখায় অনেক রোগী চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যান। ভুক্তভোগীরা এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী পাবনার সিংগা বাজার এলাকার হাকিম খান জানান, রোগীর ছেলের কোনও দোষ ছিল না। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা অন্যায়ভাবে তাকে মেরেছেন। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ও সিরাজগঞ্জের কোনাগাতির গৃহবধূ হাসিনা খাতুন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে তার শ্বশুর আলাউদ্দিন সরকার (৬৫) হৃদরোগে আক্রান্ত হন। রাত ৩টার দিকে তাকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের চতুর্থ তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়।
পরদিন বেলা ১১টার দিকে আলাউদ্দিনের শীত অনুভূত হওয়ায় পাশা ফ্যান বন্ধের চেষ্টা করেন। এ সময় সেখানে কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক নাজের কাছে তিনি ফ্যানের সুইচ কোনটি তা জানতে চান। এতে ওই চিকিৎসক ক্ষিপ্ত হয়ে বকাবকি করেন। তার চেঁচামেচিতে আরেক ইন্টার্ন আসিফ এগিয়ে আসেন। তখন পাশার সঙ্গে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য চিকিৎসকরা সেখানে আসেন। তারপরই সবাই মিলে তাকে মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে হাসপাতালের বেডে ফেলে মারধর করা হয়। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পা ধরে ক্ষমা চাইলেও রেহাই পাননি পাশা। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার ভাই মাসুম ও দুই নারী স্বজনকে লাঞ্ছিত করা হয়।
ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাত্রলীগ শজিমেক শাখার সভাপতি রাব্বী ও ছাত্রলীগ কর্মী কুতুবের নেতৃত্বে পাশাকে টেনেহেঁচড়ে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহসানের কক্ষে নেওয়া হয়। এ সময় সেখানে হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, অধ্যাপক ডা. জাকির, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী, সদর থানার ওসি এমদাদ হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন। সেখানে পাশা প্রকাশ্যে হাতজোড় করে ক্ষমা চান। একপর্যায়ে তিনি নিজেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এলাকার লোক পরিচয় দিলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আরও ক্ষুব্ধ হন। সবার সামনে তাকে মারধর ও ১০০বার কান ধরে ওঠাবসা করানো হয়। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় পাশাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাশা সুস্থ ও পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তবে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। শজিমেক হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. রেজাউল আলম জুয়েল রোগীর ছেলেকে মারধর ও কানধরে ওঠাবসা করানোর সত্যতা নিশ্চিত করে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, তিনি এ ঘটনায় মর্মাহত। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা রবিবার বেলা ৩টা থেকে ধর্মঘট শুরু করেছেন। সমস্যার সমাধানে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে ছাত্রলীগ শজিমেক শাখার এক নেতা রোগীর স্বজনের ওপর হামলার ঘটনায় সভাপতি রাব্বী ও নেতা কুতুবের জড়িত থাকার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত কতিপয় ইন্টার্ন চিকিৎসকের কারণে সংগঠন ও কলেজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্য, ‘এ অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের বিচার হওয়া উচিত। তা না হলে মানুষের মনে প্রশাসনের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।’
ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. মুনিম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের প্রবেশ কমানো, তাদের নিরাপত্তা প্রদানসহ সাত দফা দাবি আদায়ে তারা সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সকালে সভা করে পরবর্তী কর্মসূচি জানাবেন। মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় এ হামলার নেতৃত্বদানকারী ছাত্রলীগ সভাপতি রাব্বী ও নেতা কুতুবের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
/জেএইচ/ আপ-এমডিপি/