রায়ে অসন্তুষ্ট সিফাতের পরিবার

রাবি শিক্ষার্থী ওয়াহিদা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলার রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিবার ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আশানুরূপ রায় আসেনি বলে তারা দাবি করেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে পরিবারে পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সিফাতের চাচা ও মামলার বাদী মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তে সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করা সত্ত্বেও আদালত এটিকে আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা হিসেবে গণ্য করে রায় দিয়েছে। এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।’

মিজানুর রহমান আরও বলেন, ‘যদি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা হিসেবে ধরা হয়, তাতেও আসামিপক্ষ আত্মহত্যার পক্ষে কোনও যুক্তি দেখাতে পারেনি, সেক্ষেত্রে সিফাতের শ্বশুর-শাশুড়ি কিভাবে খালাস পায়?’

সিফাতের ছোট ভাই আসিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। ওপর মহল থেকে প্রভাবিত হয়েছে। আমরা শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।’

এ রায়ের এক প্রতিক্রিয়ায় রাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্ত রিপোর্টে দেখেছিলাম, তাকে (সিফাত) হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রায়ে এর সঠিক বাস্তবায়ন হয়েছে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। যেটুকু শুনেছি, তাতে সন্তুষ্ট হবার কোনও কারণ নেই।’

সিফাতের সহপাঠী মেহেরুল সুজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তবে এই রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তোষ প্রকাশ করতে পারছি না। কারণ, যেখানে কয়েক দফা ময়নাতদন্তের পর মেডিক্যাল বোর্ডগুলো সিফাতকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেখানে এমন রায়ে আমরা হতাশ।’

সোমবার দুপুরে ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন। এতে সিফাতের স্বামী মো. আসিফ প্রিসলিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। রায়ে বাকি আসামিদের খালাস দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৭ ফেব্রুয়ারি দিন (সোমবার)ধার্য করেন আদালত। মামলায় আসামি ছিলেন- সিফাতের স্বামী মো. আসিফ প্রিসলি, শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী ও সিফাতের মৃতদেহের প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান।

প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ডা. জোবাইদুর রহমান ‘সিফাত আত্মহত্যা করেছেন’ বলে জানান। কোনও প্রকার ভিসেরা রিপোর্ট ছাড়াই তিনি ওই প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে ২০১৫ সালের ২১ জুন কবর থেকে সিফাতের লাশ তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক আবার ময়নাতদন্ত করে জানান সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান।

এরপর গত বছর ২২ মার্চ নওগাঁ জেলা সিআইডি সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আহমেদ আলী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরপর মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। গত বছরের ১০ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় মোহাম্মদ হোসেন রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতের। তার শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২ এপ্রিল মহানগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা দায়ের করেন সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান।

/জেবি/

আরও পড়তে পারেন : কুমিল্লায় হত্যা মামলায় একই পরিবারের ৫ জনের যাবজ্জীবন