নওগাঁয় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে খাঁচায় মাছ চাষ

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এলাকায় মাছ চাষের নতুন এই পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবক ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীরা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

নওগাঁয় খাঁচায় মাছ চাষউপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় মাছ চাষিদের সূত্রে জানা যায়, মহাদেবপুরের মহিষবাথান এলাকা ও কুঞ্জবন এলাকায় আত্রাই নদে ৭৬টি খাঁচায় মাছ চাষ করেছেন ৩৫ জন মাছ চাষি। নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষে স্থানীয় লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে গত বছরের জুন মাসে উপজেলা মহিষবাথান গ্রামের ২০জন মৎস্যজীবীকে নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়। ওই দলকে ১০টি খাঁচায় মাছ চাষের জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়।

পরে, গত সেপ্টেম্বর মাসে ওইসব খাঁচাতে ‘মনোসেক্স’ জাতের তেলাপিয়া মাছের পোনা ছাড়া হয়। পরবর্তীতে মাছ চাষের নতুন পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবকরা নিজস্ব উদ্যোগে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করতে শুরু করেন। পোনা ছাড়ার দুই-তিন মাস পর মাছের ওজন ও মাছে কোনও রোগ-বালাই দেখা না দেওয়ায় প্রতিটি খাঁচায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভের আশা করছেন চাষিরা।

নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন মহিষবাথান গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি মহিষবাথান মৎস্যজীবী সমিতির একজন সদস্য। তিনি বলেন, ‘ছয়-সাত মাস আগে একদিন উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক মহিষবাথানে এসে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষের জন্য ২০ জনের একটি দল গঠন করতে বলেন। দল গঠন করার পর তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ১০টি খাঁচা তৈরি ও মাছের পোনা ছাড়ার জন্য ২ লাখ টাকা সরকারি অনুদানও দেওয়া হয়।’

নওগাঁয় খাঁচায় মাছ চাষ করছেন চাষীরাতিনি জানান, অনুদানের টাকায় ড্রাম, নেট ও বাঁশ দিয়ে মহিষবাথান খেয়াঘাট এলাকায় আত্রাই নদের ওপর ১০টি খাঁচা তৈরি করেন তারা। গত সেপ্টম্বর মাসে বগুড়ার আদমদিঘী থেকে তেলাপিয়া মাছের পোনা এনে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করা হয়। পরে দলের সদস্যরা নিজেদের খরচে আরও ১০টি খাঁচা তৈরি করে ওই বছরের অক্টোবর মাসে মাছের পোনা ছাড়ে। প্রতিটি মাছের ওজন ৯০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। কিছুদিন আগে পাঁচটি খাঁচা থেকে ৭৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন তারা।

সরকারি অনুদানে স্থানীয় চাষিদের খাঁচায় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে মহিষবাথানা খেয়াঘাট এলাকায় আত্রাই নদে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন দুই বন্ধু মনজেল হোসেন ও বুলবুল আহমেদ। তারা দুজন ১৫টি খাঁচায় মাছ চাষ করছেন। তারা জানান, জিআইপাইপ, নেট ও ড্রাম দিয়ে ১০টি খাঁচা তৈরি করতে তাদের খরচ পড়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর বাঁশ, নেট ও ড্রাম দিয়ে পাঁচটি খাঁচা তৈরিতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। হ্যাচারি থেকে পোনা এনে রাখার জন্য বাঁশ ও নেট দিয়ে একটি বড় হাঁফা (বড় খাঁচা) তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রতিটি খাঁচায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ পিস করে ১৪টি খাঁচায় প্রায় ১৫ হাজার পিস তেলাপিয়া মাছ ছেড়েছেন তারা। আর একটি খাঁচায় পরীক্ষামূলকভাবে পাঙ্গাস মাছ চাষ করছেন তারা দুই বন্ধু। মাছের পোনা ছাড়তে খরচ পড়েছে ৯০ হাজার টাকা।

মহিষবাথান সিবিজি (কমিউনিটি বেইসড গ্রুপ) দলের নেতা জাহাঙ্গীর হোসনে বলেন, ‘সরকারি উদ্যোগে আরও বেশি সংখ্যক চাষিকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিলে এবং খাঁচায় মাছ উদ্যোগী বেকার যুবকদের স্বল্পমূল্যে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করে এই পদ্ধতি আরও প্রসার লাভ করবে। এতে এলাকার বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হতে পারবে।’

মহাদেবপুর উপজেলা সহকারি মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, ‘বেকার সমস্যা দূর ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীদের স্বাবলম্বী করার উদ্দেশে মহাদেবপুরে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়েছে। স্বল্প পুঁজি নিয়েই এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা যায়। ২০ বাই ১০ ফিটের প্রতিটি খাঁচা তৈরি করতে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর টাকা খরচ হবে মাছের পোনা ও মাছের খাবার বাবদ। এর জন্য নিজস্ব কোনও জলাভূমির প্রয়োজন নেই। যে কেউ এই পদ্ধতি নদীতে মাছ চাষ করতে পারেন।’

/এমও/