চিকিৎসকের অভাবে দিনক্ষণ ঠিক হচ্ছে না রাউধার লাশ উত্তোলনের

রাউধা আথিফরাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী, মডেল ও মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফের লাশ কবে উঠানো হবে সে ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। চিকিৎসক না পাওয়ার কারণে লাশ উত্তেলনের দিনক্ষণ ঠিক করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসমাউল হোসেন বুধবার বিকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের আদেশনামা আমরা হাতে পেয়েছি। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. রক্তিম চৌধুরীকে লাশ উত্তোলনের সময় উপস্থিত থাকার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে চিকিৎসকের অভাবে আমরা লাশ উত্তোলনের দিনক্ষণ এখনও ঠিক করতে পারিনি। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রাউধার লাশের পুনঃময়নাতদন্ত হবে। তবে এই কাজের জন্য বাইরে থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসা হবে। মেডিক্যাল থেকে নির্দেশনা পেলেই আমরা নগরীর হেতমখাঁন গোরস্থান থেকে রাউধার লাশ উত্তোলন করবো। এজন্য সব প্রক্রিয়া ঠিক করা আছে।’  

তিনি আরও বলেন, ‘আজ (বুধবার) আমাদের অফিসে রাউধা হত্যা মামলার অ্যাডভোকেট কামরুল মনির ও রাউধার বাবা ডা. আথিফ মোহাম্মদ এসেছিলেন। আমাদের তদন্তের স্বার্থে কিছু কথা বলেছেন তারা।’রাউধা আথিফ

এ বিষয়ে রাউধা হত্যা মামলার অ্যাডভোকেট কামরুল মনির বলেন, ‘রাউধার বাবা কিছু ছবি সিআইডি কর্মকর্তাদের দিয়েছেন। যেহেতু সিআইডি মামলাটি তদারকি করছে তাই তাদের সহায়তার জন্য ছবিগুলো দেওয়া হয়েছে। তারা আমাদের বলেছে সত্য বের করে আনবে। এ ব্যাপারে তারা আত্মবিশ্বাসী।’ 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসমাউল হোসেন আরও বলেন, ‘রাউধার মৃত্যুর পর একটি ইউডি মামলা (অস্বাভাবিক মৃত্যু) হয়েছিল। সেই মামলায় রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনটি নিয়ে রাউধার বাবা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তারা বাবা আদালতে হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলার পরই পুনঃময়নাতদন্তের লক্ষে লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত তা মঞ্জুর করেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হত্যা মামলার একমাত্র আসামি রাউধার সহপাঠী ও ভারতের কাশ্মিরী মেয়ে সিরাত পারভীন মহামুদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়নি, বক্ল করে দেওয়া হয়েছে।’  

রাউধা আথিফ

 

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুনসুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের বোর্ড গঠন করে রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত হয়। এছাড়াও গত ৩১ মার্চ রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করার পরের দিনই তারা প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন। সেখানে করা হয়েছে, রাউধা গলায় কাপড় পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এই প্রতিবেদন নিয়ে আপত্তি করেন রাউধার চিকিৎসক বাবা।

রাউধার প্রথম ময়নাতদন্তের বোর্ডের সদস্য ও ইসলামী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, ‘রাউধা আথিফ ও সিরাত পারভীন মাহমুদ দুইজনই আমাদের শিক্ষার্থী। তারা দুইজনই বিদেশি। এখানে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাল্টে দেওয়ায় আমাদের কোনও স্বার্থ নেয়। আমরা যেটা পেয়েছি সেটাই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।’

প্রসঙ্গত, গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা ঝুলন্ত রাউধার মরদেহ নামিয়ে ফেলে। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করেন।রাউধার বাবা মোহাম্মদ আথিফ

গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা ‘আত্মহত্যা’ করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ১৫ এপ্রিল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর আগে রাউধার মৃত্যুর ১২ দিন পর গত ১০ এপ্রিল তার সহপাঠী সিরাতকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন রাউধার বাবা ডা. মোহাম্মদ আথিফ। রাজশাহীর আদালতে দায়ের করা ওই মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী হত্যা মামলা রেকর্ড করে পুলিশ। এরপর মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

মালদ্বীপের মেয়ে রাউধা আথিফ রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন।

/এফএস/ 

আরও পড়ুন- 

রাউধার মৃত্যু: কাশ্মিরের মেয়ে সিরাতের পাসপোর্ট ব্লক
উল্টানো ভাস্কর্য সাজিয়ে রাখলেন সেই শিক্ষার্থীরাই