বগুড়ায় দেড় মাসে তিন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ নয়জন খুন

বগুড়া

বগুড়ায় গত দেড় মাসে প্রতিপক্ষের হাতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও যুবদলের তিন নেতাকর্মীসহ ৯ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে সদরে ৩ জন, দুপচাঁচিয়ায় ২ জন, গাবতলীতে ২ জন, শিবগঞ্জে ১ জন ও কাহালুতে ১জন।

খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের মাঝে আতংক দেখা দিয়েছে। পুলিশ দাবি করেছে, প্রায় সব হত্যাকা-ের সূত্র উদঘাটন এবং জড়িতদের অধিকাংশই গ্রেফতার হয়েছে। আর এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি বলা যাবেনা।

নিহতরা হলেন, বগুড়ার কাহালুর সিন্দুইল গ্রামের মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে রিকশা চালক আনসার আলী (৫০), সদরের পলাশবাড়ি গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে অটো ভ্যান চালক তোতা মিয়া (৫৮), শাজাহানপুর উপজেলার চকদুলাহার গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে অটো ভ্যান চালক সিদ্দিকুর রহমান (৪০), শিবগঞ্জের সংসারদীঘি গ্রামের মৃত দেলোয়ার হোসেনের ছেলে বিহার ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য ওমর ফারুক (২০), গাবতলীর ধনঞ্জয় মধ্য মাঝিপাড়া গ্রামের সুনিল চন্দ্র মন্ডলের ছেলে ছাত্রলীগ কর্মী রামায়ন চন্দ্র মন্ডল (২৫), গাবতলীর পশ্চিম দোয়ারপাড়া গ্রামে মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে জেল্লার রহমান (৬০), বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মন্ডলপাড়ায় মৃত আবদুস সাত্তারের ছেলে ১৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক হযরত আলী (৪৫), দুপচাঁচিয়ার চামরুল গ্রামের মৃত কলিমুদ্দিন সরদারের ছেলে খালেক সরদার (৫৫) এবং দুপচাঁচিয়া নিউ মার্কেটে নৈশ প্রহরী মোজাহার আলী (৬০)।

জানা গেছে, বগুড়া সদর থানা পুলিশ ২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকালে শহরের মালতিনগর স্টাফ কোয়াটারের পুকুর থেকে রিকশা চালক আনসার আলীর লাশ উদ্ধার করে। বুধবার সকালে তিনি কাহালুর বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। ১৮ এপ্রিল রাতে দুর্বৃত্তরা অটোভ্যান ছিনিয়ে নিয়ে সদরের শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপালবাড়ি মাঠে চালক তোতা মিয়াকে গলা কেটে হত্যা করে। পুলিশ হত্যার কারণ উদঘাটন, কাউকে গ্রেফতার ও ভ্যানটি উদ্ধার করতে পারেনি। একই রাতে কাহালুর দরগাহাট এলাকার একটি বাগানে দুর্বৃত্তরা সিদ্দিকুর রহমান নামে অটো ভ্যান চালককে শ্বাসরোধে হত্যা করে। তবে ঘাতকরা তার ভ্যান নিতে পারেনি। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি।

গত ১৬ এপ্রিল দুপুরে শহরের নিশিন্দারা মন্ডলপাড়ায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়ের সামনে ওয়ার্ড যুবদল নেতা হযতর আলীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের মা মেরিনা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহুরুল ইসলামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গ্রেফতার শাওন নামে এক সন্ত্রাসী আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। গত ১৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় দুপচাঁচিয়ার চামরুল গ্রামে খালেক সরকার (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে গোপনাঙ্গে আঘাতে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেফতার প্রতিবেশি রিনা বেগম হত্যার দায় স্বীকার করে বলেছে, সম্ভ্রম রক্ষায় সে আঘাত করেছিল। গত ১২ এপ্রিল সকালে গাবতলীর পশ্চিম দোয়ারপাড়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের হামলায় জেল্লার রহমান (৬০) মারা যান। পুলিশ সাত আসামীকে গ্রেফতার করেছে।

গত ৫ মার্চ সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা শিবগঞ্জের সংসারদীঘি এলাকায় ছুরিকাঘাতে যুবলীগ সদস্য ওমর ফারুককে হত্যা করে। দীঘিতে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি রায়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু ও বিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়নি। গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় গাবতলীর ধনঞ্জয় মধ্য মাঝিপাড়া গ্রামে বড় ভাইয়ের সাথে অন্যদের ঝগড়া থামাতে গেলে তাকে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ কর্মী ও কলেজ ছাত্র রামায়ন চন্দ্র মন্ডল নিহত হন। পুলিশ দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। গত ২৫ মার্চ রাতে ডাকাতরা দুপচাঁচিয়া নিউ মার্কেটের নৈশ প্রহরী মোজাহার আলীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এছাড়া একটি জুয়েলার্সে ডাকাতি করেছিল। গ্রেফতার যুবদল নেতা গোলাম রব্বানী আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সে এ ঘটনায় জড়িতদের নাম প্রকাশ করেছে। পরে পুলিশ উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আকরাম হোসেন ও বগুড়া শহর থেকে ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি তাজউদ্দিন শেখ উজ্জ্বলকে গ্রেফতার করে।

এদিকে গত দেড় মাসে বগুড়া শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় ৯ জন খুন হবার ঘটনায় বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সনাতন চক্রবর্তী জানান, প্রায় সব হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও জড়িতদের সনাক্ত করা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি বলা যাবেনা।

/এমএইচ