সমাবেশে শিক্ষক সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি জঙ্গি হামলা হয়েছে এবং তাদের হামলায় সব থেকে বেশি শিক্ষক মারা গেছেন। নিয়মিত বিরতিতে এই শিক্ষক হত্যা বন্ধ করতে চাই। তাই আমরা সরকারকে ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সজাগ থাকতে বলি। কারণ, আমাদের সহকর্মীরা, পরিবার ও শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষককে হারাতে চায় না।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শাহ আজম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষায় বসতে পারছে না। কেন না, তারা তাদের প্রিয় শিক্ষক হত্যার বিচার এখনও দেখতে পায়নি।’
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাসউদ আখতার, পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও আইন বিভাগের অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বক্তব্য দেন।
এ দিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে রাবি শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করা হয়। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যাবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ ও ইংরেজি বিভাগ ব্যানার নিয়ে যোগ দিয়ে একাত্মতা প্রকাশ করে। মানববন্ধনে বক্তারা দ্রুত বিচারকার্য শেষ করে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় ক্যাম্পাসে র্যালি বের করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। র্যালি শেষে মুকুল প্রতিবাদ ও সংহতি মঞ্চে সমাবেশ করেন তারা। সমাবেশে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক মিজানুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ, ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাসউদ আখতারসহ শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বেলা সাড়ে ১২টায় দোষীদের বিচারের আওতায় এনে বিচারকার্য দ্রুত শেষ করতে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি দেয় ইংরেজি বিভাগ।
আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি পাঁচ মাসেও
হত্যা মামলায় আদালত চার্জশিট গ্রহণের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়নি। এছাড়া আসামিদের মধ্যে তিনজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর আদালতের পিপি আবদুস সালাম বলেন, ‘চার্জশিট আমলে নিয়েছেন আদালত। কিন্তু এখনও অভিযোগ গঠন হয়নি। মামলায় চার্জশিটভুক্ত আটজনের মধ্যে তিনজন বিভিন্ন সময় বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এছাড়া চার্জশিটভুক্ত চারজন ওই মামলায় গ্রেফতার আছেন। তবে মামলার প্রধান আসামি শরিফুল ইসলাম নামে এক আসামি পলাতক এখনও আছেন।’
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আট জেএমবি সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক। পরে ৮ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর আদালতের বিচারক জাহিদুল ইসলাম তা গ্রহণ করেন। এদের মধ্যে রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান, ঢাকার কালশীতে তারেক হাসান নিলু ওরফে ওসমান ও খায়রুল ইসলাম ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। এছড়া মাসকাওয়াত হাসান সাকিব, রহমতুল্লাহ, আব্দুস সাত্তার ও তার ছেলে রিপন আলী ১৬৪ ধারায় আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানায় পুলিশ। এছাড়া রাবি শিক্ষার্থী ও মামলার প্রধান আসামি শরিফুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে ২৩ এপ্রিল রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাসার অদূরে গলাকেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক রেজাউলকে। ওইদিন বিকালে ওই শিক্ষককের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আসছেন।
/বিএল/