ঘুষ না দেওয়ায় শিক্ষককে পেটালো শিক্ষা অফিসের কর্মচারী

ঘুষ দিতে রাজি না হয়ে প্রতিবাদ করায় সহকর্মীদের সামনে প্রাথমিক স্তরের এক শিক্ষককে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটান। শিক্ষকদের অভিযোগ, দাবিকৃত ঘুষ না পেয়ে উপজেলার ডায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদুল হাসানের মাথা ফাটিয়ে ও হাত ভেঙে দেওয়া হয়।

আহত প্রধান শিক্ষক রাশিদুল হাসানসহকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। এ ঘটনায় ওই শিক্ষক থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ দুপুরে অভিযুক্ত আব্দুর রশিদকে গ্রেফতার করে। লাঞ্ছিত হওয়া ওই শিক্ষক উপজেলায় ৪বার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

স্থানীয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ময়নুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘উপজেলার ডায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদুল হাসান ও তার বন্ধু নন্দলালপুর এসএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ ভবনের তিনতলায় প্রাথমিক অফিসে আসেন। সহকর্মী শিক্ষক আলাউদ্দিনের ‘লামগ্র্যান্ড’ বা স্বেচ্ছায় অবসর যাপনের বিল প্রস্তুত করার জন্য অফিস সহকারী আব্দুর রশিদের শরনাপন্ন হয়ে তার পরামর্শ চান।

অভিযুক্ত শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আব্দুর রশিদএসময় আব্দুর রশিদ শিক্ষক আলাউদ্দিনের কাছে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করলে সহকর্মী রাশিদুল এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এরই একপর্যায়ে শিক্ষক রাশিদুলকে দরজার ডাসা দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন আব্দুর রশিদ। এতে তার মাথা ফাটে ও তার ডান হাত ভেঙে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পোতাজিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করান অন্যান্য শিক্ষকরা।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঘুষ ছাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কোনও কাজ হয় না। অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ ও আব্দুল হাকিমের নেতৃত্বে শাহজাদপুরে প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকেই ঘুষ বাণিজ্য করছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারও এদের কাছে অসহায়।’

প্রত্যক্ষদর্শী প্রধান সহকারী শিক্ষক শিরিন আক্তার বলেন, ‘কি নিয়ে যেন তর্ক হচ্ছিল। একপর্যায়ে আব্দুর রশিদ ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষক রাশিদুল হাসানকে মারপিট করেন।’

উপজেলা শিক্ষা অফিসার সাঈদা সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘটনাটি একবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। বিষয়টি আমি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানিয়েছি।’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দীক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজার বক্তব্য নিতে বারবার যোগাযোগ করার পরও তাকে পাওয়া যায়নি।

শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাজা মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘শিক্ষককে মারপিট করার বিষয়টি একেবারেই ন্যাক্কারজনক। মামলার পর শিক্ষা অফিসের কর্মচারী রশিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রশিদ ছাড়াও শাহজাদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল হাকিমসহ অন্যান্য সহকারীর বিরুদ্ধেও শিক্ষক হয়রানির নানা অভিযোগ রয়েছে।’

/এমও/