বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড়ে শনিবার (২৪ জুন) দুপুর থেকে দীর্ঘ যানজটে নাকাল হয়ে পড়েন ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলগামী হাজারও মানুষ। সেতুর পশ্চিমে সিরাজগঞ্জের সয়দবাদ থেকে মুলবাড়ি হয়ে কড্ডা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশে হঠাৎ তীব্র যানজট দেখা দেয়। শত শত গাড়ি দু’পাশে আটকা পড়ায় প্রচন্ড রৌদ্র ও তাপদাহের মধ্যে শুরু হয় জনদুর্ভোগ। বিশেষ করে যারা বাস ও ট্রাকের ছাদে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন, সেইসব যাত্রীর অবস্থা হয়ে পড়ে নাজুক।
সওজের ঈদপূর্ব মেরামত কাজের জন্যই এমন কৃত্রিম যানজট বলে জানা যায়। বিবিএ প্রকৌশলী ও ট্রাফিক কন্ট্রোল বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা কৃত্রিম এ ধরনের যানজটের জন্য এখন সওজ কর্তৃপক্ষকেই দুষছেন। গত এক মাস ধরে সওজের এ ধরনের মেরামত কাজের জন্য দুর্ভোগে পড়েন উত্তরাঞ্চলগামী শত শত ঘরমুখো মানুষ। সওজ বলছে, বাধ্য হয়েই এ মেরামত কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেতুর পূর্বপাড় বা পশ্চিম পাড়ে দুটি টোল প্লাজাসহ সেতুর ওপরও শনিবার সকাল থেকে তেমন যানজট ছিল না। সেতুর পশ্চিম পাড়ে সয়দাবাদ থেকে ধীরে ধীরে চলছিল যানবাহন। এগুলোর ধীরগতির কারণে থেমে থেমে চলেছে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী হাজারও যানবাহন।
দুপুর হতে না হতেই নলকা সেতুর ওপর মেরামত কাজের কারণে ঢিমেতালে যানবাহন চলাচল করায় যানজট বাড়তে থাকে। দুপুর ২টার পর তা তীব্র আকার ধারণ করে। যানজট থেকে রক্ষা পেতে বগুড়া ও রংপুরগামী বেশকিছু বাস সিরাজগঞ্জের আঞ্চলিক মুলিবাড়ি-মিরপুর সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গেলে এটি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। সেতুর পশ্চিম পাড়ে ঐতিহাসিক মুলিবাড়ি মোড়ে ট্রেনের সিগন্যালের কারণে সেখানে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকে। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি।
সেতুর পশ্চিম পাড়ে কড্ডা মোড়ের ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দায়িত্বে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহিনুল আলম খান। ট্রাফিক পুলিশকে তৎপর রাখতে তিনি মাঠে থাকলেও যানজট নিরসন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে স্বীকার করেন।
পুলিশ সুপার মো. মিরাজ উদ্দিন কড্ডার মোড়ে অবস্থানকালে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সকাল থেকে মহাসড়কে যানবাহন ধীরগতিতে চলছিল। দুপুর পর্যন্ত অবস্থা ছিল স্বাভাবিক। নলকা সেতুর কারণে দুপুরের পর সেতুর পশ্চিম পাড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।’
পরিদর্শনরত বগুড়া অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাসের পাশপাশি ট্রাকেও লোকজন বাড়ি ফিরছে। প্রচন্ড গরম ও তাপদাহ তো আছেই, তার ওপর যানবাহনের ধীরগতির কারণে ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের জীবন অনেকটাই দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। সওজ কর্তৃপক্ষের কারণে সিরাজগঞ্জে বারবার যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে আমাদের কাছে মন্তব্য করেছেন অনেকে।’
সওজ নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল কড্ডা মহাসড়কে অবস্থানকালে বলেন, ‘ঈদে ঘরমুখো মানুষজনের নির্বিঘ্ন চলাচলে আমরা তৎপর রয়েছি। আমাদের প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক মহাসড়কে থেকে কোথাও কোনও সমস্যা আছে কিনা বা কোথায় কি ধরনের বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে, সে ব্যাপারে সজাগ। ঢাকা ও উত্তরাঞ্চলের দিকে সমানতালে বাস-ট্রাকে যাত্রী চলাচল করায় এবার চাপও বেশি।’
ঈদ মৌসুমে মেরামত কাজ করা প্রসঙ্গে এই নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘নলকা সেতুটি অনেক পুরাতন। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের ১৫-২০ বছর আগে এটি তৈরি হয়েছে। সেতুর উপরিভাগে জয়েন্ট এক্সপানশন বিকল হয়ে পড়েছে। সেগুলোর ফাঁক বন্ধ হয়ে ওপরের বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ রৌদ্রে ফুলে ফেঁপে উঠছে। এ মুহূর্তে মেরামত ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই। যানবাহন চলাচলে যেন বিঘœ না ঘটে সেজন্য গত এক মাস ধরে বারবার তা মেরামত ও সংস্কার করা হচ্ছে। ঊর্র্ধ্বতনরা বিষয়টি জানেন।’
/জেএইচ/