‘ধর্ষক’ তুফানের পুরো পরিবারই মাদক ব্যবসায় জড়িত

তুফান সরকারবগুড়ায় শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার শ্রমিকলীগ নেতা তুফান সরকারের প্রায় পুরো পরিবারই বছরের পর বছর ধরে মাদক ব্যবসায়ে জড়িত। এ ব্যবসা ছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব দেখিয়ে ভূমি দখল, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ নানান বেআইনি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শহর শ্রমিকলীগের আহ্বায়ক তুফানের পরিবার রাতারাতি কোটিপতি হয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও দলের ঊর্ধ্বতন নেতারা এসব জানলেও কেউ কখনও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি।

কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় শুক্রবার (২৮ জুলাই) গ্রেফতার হওয়ার আগে বগুড়া শহরের মানুষ তুফান সরকারকে চিনতো ‘শহরের ত্রাস’ হিসেবে। এ কারণে তুফানের পরিবারের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে নানান অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পায়নি এবং আইনও তাদের সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ও প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, তুফানের বাবার নাম মজিবর রহমান, তিনি বগুড়া শহরের চকসূত্রাপুর চামড়া গুদাম এলাকার বাসিন্দা। মজিবর রহমান একসময় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার ৭ ছেলের মধ্যে তুফান সবার ছোট। মজিবরের অন্য ছেলেরা হলো- জাহাঙ্গীর সরকার, শহর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মতিন সরকার, পুটু সরকার, সোহাগ সরকার, ওমর সরকার ও ঝুমুর সরকার। এদের মধ্যে  জাহাঙ্গীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার কোনও অভিযোগও পাওয়া যায়নি। তবে অন্যদের সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসা, ভূমি দখল, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তুফানের কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, বড় ভাই যুবলীগ নেতা মতিন সরকারের হাত ধরে তুফান শ্রমিক লীগে যোগদান করে। এরপর বাণিজ্য মেলায় জুয়া পরিচালনা, ব্যাটারিচালিত রিকশায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে মাত্র কয়েক বছরে কোটিপতি হয়ে যায়। সে একাধিক প্রাইভেটকারে চলাফেরা করতো। বগুড়া শহরে রয়েছে তার একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট রয়েছে ঢাকায়ও। বগুড়া শহরে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্যানিটারি স্টোরও রয়েছে তুফানের।

তবে এলাকার ত্রাস হওয়ায় তুফান ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে এখনও সরাসরি মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। সোমবার (৩১ জুলাই) সকালে শহরের চকসূত্রাপুর এলাকায় গিয়ে অন্তত ১৫ জন স্থানীয় ব্যক্তিকে তুফানের ব্যাপারে প্রশ্ন করলে কেউ সরাসরি উত্তর দেননি। এমনকি, তুফানের বাড়িটা পর্যন্ত কেউ দেখিয়ে দিতে রাজি হননি। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, এর আগেও মামলার কারণে  তুফান গ্রেফতার হলেও ঠিকই মুক্তি পেয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, আবারও যদি সে মুক্তি পায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে যা খুশি তাই করতে পারে সে।

বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, তুফানের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টাসহ ৪টি মামলা রয়েছে। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তুফানের ভাই যুবলীগ নেতা মতিন সরকার বেশ কয়েক বছর আগে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। এ মামলায় তার ২৭ বছর সাজা হয়েছিল। এছাড়া র‌্যাব সদস্যরা তাকে মাদক, জুয়ার সরঞ্জাম ও নগদ টাকাসহ গ্রেফতার করেছিলেন। দলীয় প্রভাবে ও অর্থের বিনিময়ে মামলা থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন। পরবর্তীতে মতিনের রাজনৈতিক তদবিরে এক র‌্যাব কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে বগুড়া ছেড়ে চট্টগ্রামে চলে যেতে হয়।

/এমএ/টিএন/

আরও পড়ুন: তুফানের ‘ক্ষমতায়’ রুমকিও চাঁদাবাজ!