সেচের অভাব মেটাতে কুয়া

সেতের অভাব মেটাবে পাতকুয়া (ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি)জলবায়ু পরিবর্তন ও ভূ-গর্ভস্থ পানির অধিকে ব্যবহারের ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলে কম সেচ নির্ভর ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছে কৃষি বিভাগ। একইসঙ্গে সেচের বিকল্প হিসেবে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সংরক্ষণ করার জন্য পাতকুয়া, খাল, বিল, নদী, বৃষ্টির পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ১০৫টি পাতকুয়া খনন করা হয়েছে এবং সেখান থেকে পানি সেচের কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এই প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, দেশের অন্য অঞ্চলের মতো বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূ-গর্ভের পানির স্তর সমৃদ্ধ নয়। তাই এ অঞ্চলে গভীর নলকূপ বা অগভীর নলকূপের পানি তোলা ও ব্যবহার সীমিত হচ্ছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত মনিটরিং কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর ও নাচোল, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামুইরহাট, সাপাহার ও পোরশা ৯টি উপজেলায় ৪৫০টি পাতকুয়া খনন করে এক হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে স্বল্প সেচের ফসল উৎপাদনসহ ৩৩ হাজার ৭৫০ জনকে খাবার ও গৃহস্থালির কাজে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।’

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের অন্য এলাকার চেয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টিপাত তুলনায় অনেক কম হয়। সেই সঙ্গে সংস্কারের অভাবে নদী ও বিলগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। একারণে কৃষিকাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তিন হাজার ২৫০টি পুকুর ও এক হাজার ৫৭০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছে।সেতের অভাব মেটাবে পাতকুয়া (ছবি: রাজশাহী প্রতিনিধি)

এছাড়া বরেন্দ্র এলাকার ভূমি উঁচু-নিচু হওয়ায় পানি সংরক্ষণের জন্য খালে ৭২৫টি ক্রসড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এক লাখ একর জমিতে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়াও নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নে বছরব্যাপী সেচ কার্যক্রমের জন্য ১৭ একরের একটি জলাধার পুনঃখনন করা হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল হুদা বলেন, ‘বোরো ধান উৎপাদনে প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। তাই সেচ কাজে ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোর জন্য বোরো ধানের পরিবর্তে সীমিত সেচনির্ভর ফসল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।’

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে পানির সংকট মোকাবিলার জন্য বোরো চাষের আবাদ কমিয়ে গমসহ অন্য ফসল (যেসব ফসলে পানি কম ব্যবহার হয়) চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে সরকার থেকে দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশের যে অঞ্চলে পানির সমস্যা নেই। সেখানে বোরো আবাদ করার জন্য বলা হয়েছে। এসব অঞ্চলে আউস-আমন ধান আবাদ করতে কম পানি লাগে। তাই এসব চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে পানির ভূ-গর্ভস্থ স্তর ঠিক রাখা যায়।’