সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি রুটে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘট অব্যাহত

সিরাজগঞ্জ 

জেলা বাস মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি রুটে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বেলকুচিতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বাস পোড়ানো ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে জেলা পরিষদ কার্যালয়ের হলরুমে পরিবহন সংগঠনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনও আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়নি।

সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্না এমপি, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ইফতেখার মো.শামিম হোসেন, জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাদি আলমাজী জিন্নাহ, সাধারণ সম্পাদক মিসবাহুল ইসলাম লিটন, শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক আনসার আলীসহ অন্যান্য পরিবহন নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাদি আলমাজী জিন্নাহ বলেন, ‘গত ১৮ জানুয়ারি বেলকুচিতে হেমা পরিবহনের বাসে আগুন ও ৮/১০টি বাস ভাঙচুরের ঘটনায় বেলকুচি থানায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তারা গ্রেফতার না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে, ধর্মঘটের কারণে জেলা শহর ও ঢাকার সঙ্গে সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল গত দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। 

অন্যদিকে, বাসের পাশাপাশি ২৫/৩০টি সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেনসহ কমপক্ষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে বেলকুচি থানায় অটোরিকশা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে শুক্রবার রাতে আরেকটি অভিযোগ করা হয়েছে।

এদিকে, বেলকুচি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা, উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের যুগ্ন আহ্বায়ক এস এম ওমর ফারুক সরকারের গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাসের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে শনিবার বিকেলে বেলকুচিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। স্থানীয় এমপি আব্দুল মজিদ মণ্ডল ও বেলকুচি উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকন্দের নেতৃত্বে বেলকুচির বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে, বাসে অগ্নিসংযোগ, বাস ও অটোরিকশাসহ দোকানপাট ভাঙচুরের প্রতিবাদে এবং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার বিকেলে পৌরসভা কার্যালয়ে অরেকটি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির আহ্বান করা হয়েছে।

বেলকুচি থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, পরিবহন মালিক শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দুটি অভিযোগ গত দুই দিনে জমা পড়েছে। একটি দ্রুত বিচার আইনে রেকর্ড করা হলেও অন্যটি (সিএনজি অটোরিক্সা) এখনও রেকর্ড হয়নি। আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত গত ১২ ডিসেম্বর বেলকুচি পৌরসভা কার্যালয়ে হামলা, সরকারি কাজে বাধা, চাঁদাবাজি ও মেয়রকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে মেয়র আশানুর বিশ্বাস আদালতে মামলা করেন। মামলায় উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগ আহ্বায়ক সাজ্জাদুল হক রেজা ও যুগ্ন-আহ্বায়ক এস এম ওমর ফারুক সরকার, জেলা ছাত্রলীগের সাময়িক বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি রিয়াদ হোসেন ও আরমান হোসেনসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১৫ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করা হয়। গত ১৮ ডিসেম্বর সাজ্জাদুল হক রেজা ও এস এম ওমর ফারুক সরকারকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারের পর পরই তাদের সহযোগী ও সমর্থকরা বেলকুচিতে বাসে অগ্নিসংযোগ, বাস ও সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুরসহ তাণ্ডব চালায়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে সিরাজগঞ্জ-বেলকুচি রুটে অনির্দিষ্টকালের বাস ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। 

আরও পড়ুন: লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল