শুক্রবার সকালে কাদোয়া কয়রাপাড়া গ্রামে সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা এ প্রতিবেদককে জানান, গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা জানতেন না সাগর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারা টেলিভিশনের খবর ও প্রচারিত ছবি দেখে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সাগরের জড়িত থাকা এবং এ কারণে গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন।
কাদোয়া কয়রাপাড়া গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কের পাশেই সাগরদের বাড়ি। মাটি দিয়ে তৈরি পুরনো ঘর। এখানেই থাকেন তার বাবা-মা। এ দম্পতির তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সাগর মেজো।
তার বড় ভাইয়ের হাবিবুর রহমান (৩৫) এবং ছোট ভাইয়ের নাম আরিফুর রহমান (২২)। হাবিবুর রহমান ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করেন। আর আরিফুর রহমান চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙার কাজ করেন। সাগরের দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।
জঙ্গি সাগরের মা আছিয়া বেগম গৃহিণী। তবে সাংসারিক কাজের ফাঁকে তিনি বাড়ির একটি কক্ষকে দোকান বানিয়ে লজেন্স, বিস্কুট ও চানাচুরে মতো খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করেন। আছিয়া বেগম জানান, সাগর বিয়ে করেছে পাবনায়। স্ত্রীকে নিয়ে কোনোদিন সে গ্রামে আসেনি। সে নিখোঁজ হওয়ার পর ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর জয়পুরহাট সদর থানায় তিনি (মা আছিয়া খাতুন) একটি জিডি করেন।
পুলিশের হাতে গ্রেফতার সাগরের বাবা হারুনুর রশিদ একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। কয়রাপাড়া বাজারের মোড়ে তার একটি ‘চেম্বার’ রয়েছে। তিনি দাবি করেন, সাগর গ্রামের কয়রাপাড়া মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে বানিয়াপাড়া কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। তবে আলিম পাস না করেই সে ঢাকায় চলে যায়। এরপর থেকে তারা জানতেন সে ঢাকায় চাকুরি করে। সাগর বাড়িতে খুব একটা আসতো না। বাড়িতে টাকা-পয়সাও পাঠাতো না।
হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বছর চারেক আগে একবার সাগর ঢাকা থেকে বাড়ি আসে। তখন বাড়িতে তার টাকা না পাঠানো নিয়ে কথা উঠলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর আর তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। শেষমেশ ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আমার স্ত্রী আছিয়া বেগম থানায় জিডি করেন।’
আছিয়া বেগম বলেন, ‘অনেক আগে সাগরের ব্যাপারে পুলিশ আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এরপর থেকেই আমরা পুলিশের নজরদারিতে আছি।’
সাগরের চাচি ববিতা খাতুন বলেন, ‘সাগর কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা বলতো না। সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। টেলিভিশনে তার গ্রেফতার হওয়ার খবর দেখে আমরা হতবাক হয়েছি। সে যে এত বড় জঙ্গি আমরা জানতেই পারিনি।’
আজিজুল ইসলাম নামে কাদোয়া কয়রাপাড়া গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘হাদিছুরের নাম যে সাগর, এটা আমাদের জানা ছিল না। গ্রামে সাগর নামে তাকে কেউ চেনে না। সবাই জানে, তার নাম হাদিছুর। টেলিভিশনে খবর দেখার পর গ্রামে জানাজানি হয় যে, জঙ্গিবাদী কার্যক্রমে জড়িত থাকায় হাদিছুরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ হাদিছুরের বাবা-মাকে ‘খুবই নিরীহ ও সাধারণ প্রকৃতির’ মানুষ বলেও দাবি করেন তিনি।
জেলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার আগে থেকেই আমরা জেলার নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি। তখন আমরা জানতে পারি, হাদিছুর রহমান সাগর দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আসে না। এরপর তার বাবাকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, সাগর ২০১৪ সাল থেকে নিখোঁজ। কিন্তু তারা পুলিশকে বিষয়টি জানায়নি। তার নিখোঁজ নিয়ে পরিবার খুব একটা তৎপরও ছিল না। তবে আমরা তৎপর ছিলাম। কিন্তু এলাকায় না আসায় তাকে আমরা পাইনি।’
বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, ‘পুলিশের বিশেষ ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সদস্যদের মাধ্যমে আমরা নিশ্চিত হই, হাদিছুর (সাগর) জঙ্গিদের সঙ্গে আছে। আর বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের মাধ্যমে জানতে পারি, সে রাজশাহী, খুলনা এবং কুষ্টিয়া এলাকার নব্য জেএমবি সদস্যদের সামরিক প্রধানের দায়িত্বে আছে।’