নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দা, ধামইরহাট উপজেলা ছাড়াও জেলার ১১টি উপজেলায় ১৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে আমবাগান গড়ে উঠেছে। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে জেলায় বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ আম চাষ। এরমধ্যে চলতি বছর প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১২ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন হিসেবে এ বছর আম উৎপাদন হওয়ার কথা ১ লাখ ৭৫ হাজার ১৪০ মেট্রিক টন।
এ বছর জেলায় আমের ফলন ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যে পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর এলাকায় আগাম জাতের আম উঠতে শুরু করেছে। আমের মোকাম হিসেবে পরিচিত পোরশার সারাইগাছী, নিয়ামতপুরের আড্ডা ও সাপাহার বাজারে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আমের গঠন ও স্বাদ ভালো হওয়ায় নওগাঁর আমকে ব্যবসায়ীরা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম হিসেবে চালিয়ে দিচ্ছে।
নওগাঁর পোরশা, সাপাহার ও নিয়ামতপুর উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ হয়ে থাকে। জেলায় সবচেয়ে বেশি আমের আবাদ হয় পোরশা উপজেলায়।
পোরশা উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুল আলম বলেন, ‘এ বছর পোরশায় আমের আবাদ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এখাকার বেশিরভাগ আম চাষি অভিজ্ঞ। এ কারণে এখানে আমের ফলনও হয় বেশি। এখানে ফজলি, ক্ষিরশাপাতি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, আশ্বিনা, আম্রপালিসহ সুপরিচিত ও সুস্বাদু প্রায় সব জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে এই আমগুলোই ঢাকা কিংবা দেশের অন্য অঞ্চলে গিয়ে চাঁপাই কিংবা রাজশাহীর আম বলে পরিচিতি পাচ্ছে।’
পোরশা উপজেলার নিতপুর ও গাঙ্গুর ইউনিয়নের তছলিম উদ্দিন, নয়ন বাবু, শামসুল আলম শাহ চৌধুরী, আশরাফুল ইসলামসহ ১০-১৫ জন আম চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ হচ্ছে। আম চাষের উপযোগী মাটি হওয়ায় আমের মানও বেশ ভালো।
তারা বলেন, পাইকার আম কিনে আমাদের আমকে রাজশাহীর আম হিসেবে যখন চালায় তখন আমাদের কষ্ট লাগে। নওগাঁর আম বাংলাদেশের যেকোনও আমের চেয়ে মানের দিক থেকে ভালো। তাই আমরা চাই আমাদের আম দেশবাসী চিনুক নওগাঁর আম হিসেবে। আমরা চাই এ ব্যাপারে সরকার যেন প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনোজিৎ কুমার মল্লিক বলেন, `গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহী বিভাগের চারটি জেলায় (রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর) মোট আম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিক টন। এরমধ্যে শুধু নওগাঁতেই আমের উৎপাদন ছিল সবচেয়ে বেশি। ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে নওগাঁ জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছিল। নওগাঁয় উৎপাদিত প্রায় সব আম আধুনিক প্রজাতির। অথচ নওগাঁর আমের কোনও পরিচিতি নেই। ব্যবসায়ীরা নওগাঁ থেকে আম কিনে নিয়ে সেগুলোকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার অভাবে নওগাঁর আমের কথা দেশবাসী জানতে পারছেন না।’ তিনি নওগাঁর আমকে পরিচিত করার জন্য সবার সহযোগিতা চান।