অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নওগাঁতে জনদুর্ভোগ

নওগাঁর কুমাইগাড়ী বাইপাস-ডিগ্রির মোড় সড়কের পাশে অপরিকল্পিতভাবে বর্জ্য ফেলায় বিপাকে পড়েছে স্থানীয় জনগণ। দুই লাখ জনসংখ্যার শহরটির সব বর্জ্য ওই স্থানে ফেলায় চার পাশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র দুর্গন্ধ। স্কুল,কলেজের ছাত্রী ও পথচারীরা নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ রাস্তা পার হওয়ার সময় বমি করে ফেলছেন। অন্য কোনও স্থান নির্ধারিত না থাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকার কাছে অবস্থিত ওই স্থানেই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা চারটি ট্রাক ও ১৫টি ট্রলিতে ভরে বর্জ্য ফেলেন প্রতিদিন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু জমির মালিকানা নিয়ে রিট আবেদন বিচারাধীন থাকায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়েছে।Naogaon picture - 3

বর্তমানে পুরো নওগাঁ পৌরসভায় প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। শুরু থেকেই পৌরসভার বর্জ্য কোমাইগাড়ী এলাকায় ছোট যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের রাস্তার কাছে ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কের পশ্চিম পাশে ফেলা হচ্ছে। অথচ কোমাইগাড়ীর ওই ময়লা ফেলার ওই স্থানটির পাশেই আবাসিক এলাকা। আবর্জনা ফেলার স্থান থেকে ৪০০ মিটার দূরে নওগাঁ সরকারি কলেজ ও নওগাঁ পলিটেকনিক কলেজ। পৌরসভার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৩ সালে নওগাঁ পৌরসভা গঠিত হয়। তখন উকিলপাড়া, মাস্টারপাড়া, পারনওগাঁ, চকদেবপাড়া, হাটনওগাঁ, কালীতলা, ধর্মতলা, বাঙ্গাবাড়িয়া ও কাজিপাড়া ছিল পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত। ১৯৮৯ সালে আরও কিছু এলাকাকে যুক্ত করা হয়। এসব এলাকা হচ্ছে, আরজি নওগাঁ, রজাকপুর, শেখপুরা, বোয়ালিয়া, জগৎসিংহ, খালিশকুড়ি, ভবানীপুর, সুলতানপুর, কোমাইগাড়ি, বরুনকান্দি, শিবপুর, চকবাড়িয়া ও চকরাম চন্দ্র গ্রাম।

কুমাইগাড়ী বাইপাস-ডিগ্রির মোড় সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে শীবপুর গ্রামের বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, ‘আমরা খুব কষ্ট করে ময়লা ফেলার স্থানটি পার হই। বহু বছর থেকে এখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোনও কোনও অসুস্থ মানুষ এই এলাকা পার হতে গেলে বমি করে ফেলে।’ রাস্তার পাশে খোলা স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ফলে বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। বক্তারপুর  এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ডিগ্রির মোড়-বাইপাস সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন যাওয়া-আসা করি। কিন্তু কোমাইগাড়ী এলাকার এলেই বর্জ্য ফেলার ওই স্থানটি পার হওয়ার সময় যেন দম বন্ধ হয়ে যায়।’

কাউন্সিলর এস এম রাশিদুল আলম (সাজু) জানিয়েছেন, কিছুদিনের মধ্যেই ময়লা থেকে জৈব সার উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করা হবে।ইতোমধ্যে পৌরসভার পক্ষ থেকে করণীয় প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। জমির মালিকানা নিয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হওয়ার কারণে কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে। নওগাঁ পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) মজিবর রহমান জানিয়েছেন, অন্য কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ভরে কোমাইগাড়ী এলাকায় আবর্জনা ফেলেন।

পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, ‘পৌরসভা বাধ্য হয়েই এখানে ময়লা ফেলছে। নওগাঁ পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি প্রকল্প ইতোমধ্যে অনুমোদিত হয়েছে। একটি বিদেশী দাতা সংস্থা প্রকল্পটির অর্থায়ন করছে। এটি এখন টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। চলতি বছরেই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্যের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা ও পরিশোধনাগার নির্মিত হয়ে গেলে নওগাঁবাসীর এই সমস্যা আর থাকবে না।’