উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, এ মডেল খামার সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে একদিকে নিরাপদ মাংস মিলবে, অন্যদিকে বেকার সমস্যার সমাধান হবে। খামারিরা তাদের ব্যবসার প্রসারে ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে শেরপুর পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশি জাতের মুরগির খামারের কার্যক্রম শুরু হয়। ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রায়হানের নেতৃত্বে তখন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে উপজেলার শিক্ষিত বেকার তরুণ-তরুণীদের দেশি মুরগির অর্গানিক খামার গড়তে উদ্বুদ্ধ করা হয়। শুরুতে এগিয়ে আসেন ১০ জন। তাদের সফলতা দেখে আরও অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রথমদিকের উদ্যোক্তদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘স্বপ্ন ছোঁয়ার সিঁড়ি’ নামে একটি সংগঠন। এ সংগঠন উপজেলার কয়েকটি এলাকায় এ খামারের ধারণা ছড়িয়ে দেয়। আগ্রহীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও বিপণনসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হয়। এখন শেরপুর উপজেলায় ৩৫০টি দেশি মুরগির খামার গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন ১০০ জন। একসময় তারা চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগলেও এখন সবাই স্বাবলম্বী।
সুবর্ণা খাতুন বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর বেকার জীবনযাপন করছিলেন। তিনিও দেশি মুরগি লালন-পালনে প্রশিক্ষণ নেন। শুরুতে তার খামারে ১০টি মুরগি থাকলেও এখন রয়েছে তিনশটি। এ খামারের লাভ থেকে আরও একটি বড় খামার ও নিজের বাড়ি নির্মাণের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
খামারি আবদুস সালামের দাবি, তিনি প্রতি মাসে অন্তত ৫০ হাজার টাকা আয় করেন।
প্রথম ১০ জন খামারির একজন শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম গ্রামের জাকারিয়া হোসেন। তিনি লেখাপড়া শেষ করার পর চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছিলেন। শুধু প্রতিবেশী নয়; স্বজনদেরও অবহেলার শিকার হয়েছিলেন। প্রথমে ৫০টি মুরগি দিয়ে শুরু করলেও এখন তার খামারে প্রায় এক হাজার মুরগি। তিনি নিজেই মুরগির খাবার তৈরি করেন।
এ খামার পদ্ধতির প্রধান উদ্ভাবক শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রায়হানের দাবি, ‘এ সেক্টরটি সম্ভাবনাময়। স্বল্প বিনিয়োগে চাকরির বিকল্প কর্মসংস্থানের নতুন খাত এটি।’
শেরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) লিয়াকত আলী সেখ ও জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার এ খামার মডেল হিসেবে সারাদেশে চালু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান। তাদের দাবি, এ পদ্ধতির মুরগির খামারের সঙ্গে শেরপুর উপজেলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দুই হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।