ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ ১৪০ ভবনে চলছে পাঠদান

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদানমরিচা পড়ে টিনের চাল ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও ফুটো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলে শ্রেণিকক্ষের মধ্যে পানি পড়ে। আর ঝড় বৃষ্টি হলে তো কথাই নাই। যেকোনও সময় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এমন ঝুঁকি নিয়েই ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খড়িখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলছে পাঠদান। এছাড়া শ্রেণিকক্ষে নেই পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। এমনকি স্কুলে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা।

এমন অবস্থা শুধু খড়িখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নয়। জেলার মোট ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪০টিই ঝুঁকিপূর্ণ।

খড়িখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদা খাতুন জানান, বিদ্যালয়টি ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৩ সালে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ইট দিয়ে দেয়াল করে টিনের চালা দেওয়া হয়।সেই টিনে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে তিনটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে পানি পড়ে। ঝড় বৃষ্টিতে অনেক টিন ভেঙে পড়ে গেছে। ২০০৬ সালে ২ কক্ষ বিশিষ্ট একটি নতুন ভবন করা হয়। সেখানে একটি কক্ষে প্রোজেক্টর ও অন্য কক্ষে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিশুদের পড়ানো হয়। তাই বাধ্য হয়ে ভাঙা ও জরাজীর্ণ তিনটি শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীদের চলছে পাঠদান। বিষয়টি তিনি জেলা প্রাথমিক অফিসকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদানএকইরকম অবস্থা কালীগঞ্জ উপজেলার জটারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এই বিদ্যালয়ের ভবনটি ফেটে গেছে। পিলার থেকে পলেস্তরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে। বিদ্যালয়টি যেকোনও সময় ভেঙে পড়তে পারেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার ঘোষ।

তিনি আরও জানান, ৪ বছর ধরে বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একবার ভূমিকম্পে সব বিদ্যালয় ভবন ফেটে যায়। পলেস্তরা খসে পড়ে। সে সময় কিছুটা মেরামত করে বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। এখন আমরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি। বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বলে তিনি লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন এবং অতি শিগগিরই নতুন ভবন যাতে নির্মাণ করা হয় সেজন্য আবেদন করেছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদানএমন চিত্র দেখা গেছে মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের মাইলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এ বিদ্যালয়টি টিনসেট দিয়ে করা।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, ১৯৫৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৭৩ সালে সরকারি করণের পর বিদ্যালয়টি ইটের দেয়াল ও টিন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৬টি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে দু’বছর আগে চারটি শ্রেণিকক্ষ পরিত্যক্ত করা হয়েছে। বাকি দু’টি শ্রেণিকক্ষে কোনও রকমে চলছে পাঠদান।

তিনি বলেন, ‘ঝুঁকির মধ্যেই আমাদের পাঠদান করাতে হচ্ছে।’

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদানকালীগঞ্জ উপজেলার সিংগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিল্পী আক্তার বলেন, তার বিদ্যালয়ে ২৮৫ জন শিক্ষার্থী আছে। বিদ্যালয়টির টিন নষ্ট হয়ে গেছে। বিল্ডিংয়ের দেয়াল ফেটে গেছে। রাস্তার পাশ দিয়ে গাড়ি গেলে বিল্ডিং কাঁপে। এই  বিদ্যালয় ভবনটি ২ বছর আগে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে তারা আর ক্লাস নেন না। ২০০৪ সালে পিইডিবি-২ প্রকল্পের আওতায় তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং করে দেওয়া হয়েছে। শ্রেণিকক্ষ স্বল্পতার কারণে তারা দুই শিফটে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা শুনছেন নতুন বিদ্যালয় ভবন হবে। কিন্তু এখনও কোনও নতুন ভবন হয়নি।

মহেশপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মাহবুবুর রহমান বলেন, তার উপজেলায় ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলো তালিকা করে জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডারও হয়েছে বলে তিনি জানান। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবর শিগগিরই পুনর্নির্মাণের ব্যাপারে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদানকালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেলিমা আক্তার বানু জানান, তিনি এই উপজেলা নতুন যোগদান করেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা করে জেলা অফিসে পাঠিয়েছেন তবে কয়টি ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয় তা তিনি জানাতে পারেননি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলার ৬টি উপজেলায় ১৪০টি ঝুঁকিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ  বিদ্যালয়ে রয়েছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদরে ১৬টি, কালীগঞ্জে ৩৮টি, কোটচাঁদপুরে ৪টি, মহেশপুরে ১১ টি, হরিণাকুণ্ডে ২৯টি ও শৈলকুপা উপজেলায় ১৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ আকতারুজ্জামান বলেন, জেলায় ১৪০টি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন আছে। বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। ভবনগুলোর তালিকা করে সেগুলো পুনর্নির্মাণ ও নতুন ভবনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।