রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র হত্যায় একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

আসামি রনক (ছবি- প্রতিনিধি)

রাজশাহী সিটি কলেজের ছাত্র ফারদিন ইসনা আষাড়িয়া রাব্বী (১৯) হত্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি মো. রনক (২৩)। শনিবার (১৭ আগস্ট) বিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেলিম রেজার আদালতে আসামি ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি দেন। শনিবার রাত ৮টায় গণমাধ্যমে পাঠানো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “রনক তার জবানবন্দিতে জানান, তিনি বিভিন্ন নেশাদ্রব্যে আসক্ত। ঘটনার দিন একাই ছিনতাই করার উদ্দেশে টি-শার্টের ভেতরে দা নিয়ে ভোর ৫টা থেকে ঘটনাস্থলের পাশে আমরুর কনফেকশনারির কাছে ওঁত পেতে ছিলেন। ওই সময় ভিকটিম রাব্বী তিতুমীর ট্রেন ধরার উদ্দেশে ঘাড়ে ও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পায়ে হেঁটে হেঁটে বর্ণালীর মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় রনক রাব্বীর পথরোধ করে দা বের করে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেন। তখন রাব্বী দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় রাব্বী রনককে ফেলে দেন এবং চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। ওই সময় রনক রেগে গিয়ে পিছন থেকে রাব্বীর মাথায় দা দিয়ে কোপ দেন। তখন ভিকটিমের মাথায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। ভিকটিম মাটিতে পড়ে যান। আর রনক অবস্থা বেগতিক দেখে টাকা, মানিব্যাগ, মোবাইল, ব্যাগ না নিয়েই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান।’

এ ব্যাপারে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘আসামি হেরোইনের টাকা সংগ্রহের জন্য ভিকটিমের মাথায় ধারালো দা দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছেন। আসামি জানান, তিনি ভিকটিমকে আগে থেকে চিনতেন না। ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারেন, ভিকটিম সিটি কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং মেসে বসবাস করতেন।’

উল্লেখ, গত ৬ আগস্ট ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হেতেম খাঁ ছোট মসজিদ সংলগ্ন পুরাতন পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের সামনে পাকা রাস্তার ওপর মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয় ফারদিন ইসনা আষাড়িয়া রাব্বীকে। তিনি রাজশাহী সিটি কলেজের বিজ্ঞান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ির দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মোমিনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত মোজাফফর হোসেন। তিনি নগরীর হেতেম খাঁ এলাকায় মেস ভাড়া করে থাকতেন। ঘটনার দিন ভোরে তিনি ঈদের ছুটিতে কাটাতে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য হেতেম খাঁর মেস থেকে বের হন তিনি। তার ট্রেন ছিল ৬টা ২০ মিনিটে। কিন্তু সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি নিহত হন। এর একদিন পর আসামি মো. রনককে হেতেম খাঁ থেকে ৭.২ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করা হয়। তার বাড়িও নগরীর একই এলাকায়। বাবার নাম মৃত কুদরত আলী।

আরএমপির মুখপাত্র গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, আসামি মো. রনকই রাব্বীকে হত্যার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এমতাবস্থায় তাকে আটকের পরের দিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশি রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গত ১৪ আগস্ট তাকে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে রনক ওই হত্যা মামলার ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।’