যাত্রীর ফেলে যাওয়া ২০ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিলেন রিকশাচালক

রিকশাচালক লাল মিয়া (ছবি– প্রতিনিধি)

বগুড়া শহরে রিকশাচালক লাল মিয়ার সততায় অভিভূত হলেন সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ। চালকের কাছ থেকে রিকশায় ফেলে যাওয়া ২০ লাখ টাকাভর্তি ব্যাগ ফেরত পেয়ে যারপরনাই খুশি তিনি।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকালে শহরের সাতমাথায় এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে টাকাগুলো বুঝে নেন ওই ব্যবসায়ী। এসময় তিনি আগামী রবিবার (১৭ নভেম্বর) লাল মিয়াকে একটি রিকশা ও মোবাইল ফোন উপহার দেবেন বলে জানান।

রিকশাচালক লাল মিয়া (৫৫) শহরের মালগ্রাম মধ্যপাড়ার মৃত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে। আর সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবঘার দ্বীননাথ প্রসাদের ছেলে।

পুলিশ জানায়, নন্দীগ্রামে রাজিব প্রসাদের ‘প্রসাদ অ্যান্ড সন্স’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার স্বার্থে তিনি বগুড়া শহরের জলেশ্বরীতলায় ভাড়া বাসায় থাকেন। নিজ প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য আজ (শুক্রবার) সকাল ৭টার দিকে তিনি বাসার নিচ থেকে লাল মিয়ার রিকশায় ওঠেন। রাজিব প্রসাদের কাছে একটি ব্যাগে প্রায় ২০ লাখ টাকা ও অন্য দুই ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিল। রাজিব প্রসাদ শহরের সাতমাথায় রিকশা থেকে নেমে বাসে ওঠেন। কিছুক্ষণ পর তার খেয়াল হয়, টাকার ব্যাগ রিকশায় ফেলে এসেছেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাস থেকে নামেন এবং বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। সদর থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান রিকশাচালক লাল মিয়াকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন এসআই জহুরুল ইসলামকে। এসআই জহুরুল ইসলাম শহরের গোগাইল রোড এলাকার একটি দোকানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেন। এ ছাড়া, আরও নানা মাধ্যমে লাল মিয়ার সন্ধান শুরু করেন।

সার ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ (ছবি– প্রতিনিধি)

সূত্র আরও জানায়, এদিকে লাল মিয়া পড়ে থাকা ব্যাগ দেখে তা খুলে ভেতরে টাকা দেখতে পান। তখন তিনি রিকশা নিয়ে ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদকে খুঁজতে শুরু করেন। কিন্তু রাজিব প্রসাদকে খুঁজে না পেয়ে তিনি টাকার ব্যাগ নিজের ভাড়া বাসায় নিয়ে এসে রাখেন। এরপর শহরের খান্দার এলাকায় এসে টাকা হারানোর মাইকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এসময় এসআই জহুরুল ইসলাম এসে লাল মিয়াকে টাকা হারানোর কথা জানান। বর্ণনা শোনার পর লাল মিয়া জানান, টাকার ব্যাগ তার বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। এরপর টাকার ব্যাগসহ লাল মিয়াকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান এসআই জহুরুল ইসলাম। সেখানে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞার উপস্থিতিতে রাজিব প্রসাদের হাতে টাকার ব্যাগ তুলে দেন লাল মিয়া।

ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ জানান, লাল মিয়াকে একটি নতুন রিকশা কিনে দেবেন তিনি। এ ছাড়া, সদর থানার ওসিকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন।

লাল মিয়া জানান, গরিব হলেও পরের অর্থ-সম্পদের প্রতি তার লোভ নেই। ভাড়ার রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট দুই ছেলে তার সঙ্গে থাকেন। রিকশায় ফেলে যাওয়া টাকাগুলো তিনি মালিককে ফেরত দিতে পেরে অনেক খুশি।

বগুড়া সদর থানার ওসি এসএম বদিউজামান জানান, লাল মিয়ার সততায় তারা অভিভূত হয়েছেন। টাকা ফেরত পেয়ে যারপরনাই খুশি হয়েছেন ব্যবসায়ী রাজিব প্রসাদ।