রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৪ হাজার ৯৮১ হেক্টর। আর আবাদ হয়েছে ৭৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ৫.৪৭ মেট্রিকটন হিসাবে ধানের ফলন হবে ৪ লাখ ১৭ হাজার ৬০ মেট্রিকটন। এরই মধ্যে ৩১ হাজার ৯১৩ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় আমনের বাম্পার ফলের আশা করছেন কৃষকেরা।
কৃষকেরা জানান,বোরো মৌসুমে সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করলেও তারা সুফল একেবারে পাননি। ধানের বাজার পুরোটাই চলে গিয়েছিল রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সিন্ডিকেটের দখলে। ফলে ধান বিক্রি করে কৃষকরা উৎপাদন খরচই তুলতে পারেনি। এবারও সে শঙ্কা রয়েছেন।
তানোর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান জানান, আমন মৌসুমে ২২ বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। ধান কাটা শুরু করেছেন। এবার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তিনি।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামছুল হক জানান, অল্প করে নতুন চাল বাজারে উঠছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ালেও এটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা নেই। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরোদমে নতুন চাল বাজারে আসলে দাম কমে যাবে।
খাদ্য অধিদফতর রাজশাহী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে ২০ নভেম্বর থেকে আমন মৌসুমের ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়াও এই মৌসুমে জেলার চুক্তিবন্ধ মিলারদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হবে। রাজশাহীতে ২৬ টাকা কেজিতে ৮ হাজার ১৫০ মেট্রিকটন ধান কিনবে সরকার।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) নাজমুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘রাজশাহীতে এবার ১ লাখ ৯০ হাজার কৃষক আমন ধান চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও উপজেলা পর্যায় থেকে আমরা সংগ্রহ করতে পারেনি। কারণ লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্ধারণ করে ধান সংগ্রহ করা হবে। তাই আমরা ২০ নভেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। দুই-তিন দিনের মধ্যে ধান সংগ্রহ শুরু হবে।’
রাজশাহীর বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কেজিতে ৪-৬ টাকা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, আমদানি কম থাকায় চালের দাম বেড়েছে। বস্তাপ্রতি বেড়েছে ২৫০-৩০০ টাকা। তবে নতুন আমন ধান বাজারে আসলে কমতে পারে দাম।
খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন চাল বাজারে আসেনি। মধ্যসত্ত্বভোগীরা বাড়িয়েছেন চালের দাম। তারা কৃষকদের থেকে অল্প দামে ধান কিনে চাল করে গুদামে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছেন।
রাজশাহী নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকার মেসার্স সততা এন্টারপ্রাইজ চালের আড়তের বিক্রেতা সালাইমান আলী বলেন, ‘প্রায় সব ধরনের চালের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে। আমাদের এখানে স্বর্ণা চিকন ৮৪ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০-২৫০০ টাকা দরে। ২৮ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ২ হাজার ৮০০ টাকা। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ১০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার টাকা। এছাড়া আতপ (পোলাও) বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৪০০ টাকা দরে।’
রাজশাহীর সাহেব বাজারের এপি চাউল ভান্ডারের মিলন প্রসাদ জানান, আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা, মিনিকেট ৪৬-৫০ টাকা, স্বর্ণা ৩০-৩৫ টাকা, জিরাশাল ৪৪, বাসমতি ৫৫, সিন্ধু পায়জাম ৫০ টাকা, সিন্ধু কাটারি ভোগ ৮০ টাকা, নাজিরশাল নতুন ৬০ ও পুরানো ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
নগরীর সুবল চাউল ভান্ডারের মালিক আবদুল করিম বলেন, পোলাওসহ সব ধরনের চাল কেজিতে ৪-৬ টাকা বেড়েছে। ১০-১২ দিন আগে থেকে চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া নতুন আমন ধান উঠলেও বাজারে চাল আসেনি। অনেক মানুষ নতুন চালের শীতের ভাপা পিঠা খাবে বলে দোকানে এসে ঘুরে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে মধ্যসত্ত্বভোগীদের কাছে আটকে আছে চাল। তারা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই খুচরা বাজারে বাড়ছে দাম। এখানে খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেকটাই অসহায়।
চাল কিনতে আসা জয় জানান, তারা সপ্তাহে সপ্তাহে বাজার করে। গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে তিন টাকা কেজিতে বেশি নিলো। ব্যবসায়ীরা তাকে জানিয়েছে, সরবরাহ কম তাই বেড়েছে চালের দাম।
রাজশাহী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করা হচ্ছে। কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আমরা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’