ফসলের মাঠে বায়োচার ব্যবহারে মিলছে সুফল

নওগাঁয় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষকরা। এলাকায় পরিবেশ দূষণ রোধের পাশাপাশি কৃষি বন্ধু চুলার ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। এ চুলায় রান্নার পাশাপাশি উৎপাদিত বায়োচার জমিতে ব্যবহারের ফলে মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতেও তা সহায়ক হচ্ছে।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জমিতে একবার বায়োচার ব্যবহার করলে শতাধিক বছর এর কার্যকারিতা থাকে। তাই কার্বন সমৃদ্ধ বায়েচার বা কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি জমির উর্বরতা ও ফলন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সূত্র জানা গেছে, জেলার মান্দা উপজেলার প্রায় পাঁচ শতাধিক কৃষক চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাধাকপি, সরিষা, গম, ধান, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ভুট্টাসহ নানা ফসলি জমিতে কার্বন সমৃদ্ধ বায়োচার বা কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করেছেন। প্রকল্পটি আইসিসিও এবং কার্ক ইন অ্যাক্টাইয়ের সহায়তায় বেসরকারি সংস্থা সিসিডিবি মাঠ পর্যায়ে ডিএইকে সঙ্গে নিয়ে বাস্তবায়ন করছে।

কৃষি বন্ধু চুলায় কাঠ বা গোবর ও বিভিন্ন ধরণের বায়োমাস বা কৃষি অবশিষ্টাংশ পুড়িয়ে যে বায়োচার পাওয়া যায়, তা কার্বন সমৃদ্ধ। এই কার্বন সমৃদ্ধ বায়োচার জমিতে ব্যবহারে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায় ও খরা প্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চাষাবাদ করা সহজ হয়। বায়োচার জমিতে ভারী ও বিষাক্ত ধাতুকে (হেভী মেটালকে) নিষ্ক্রিয় করে রাখে। ফলে উদ্ভিদের শিকড়ের সাহায্যে তা ফসল পর্যন্ত পৌঁছায় না। এতে পাওয়া যায় নিরাপদ ও বিষাক্ত ধাতু মুক্ত ফসল।

এছাড়া বন্ধু চুলায় ৩০-৪০ শতাংশ জ্বালানি কম লাগে তাই বনজ সম্পদও রক্ষা পায়। একই সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ জলবায়ু পরিবর্তনেও তা ব্যাপক ভূমিকা রাখে।

উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর গ্রামের গৃহিনী আদুরী বেগম খাবার রান্নায় ভরসা করছেন কৃষি বন্ধু চুলায়। আর চুলা থেকে যে কয়লা উৎপাদন হয় তা থেকে তৈরি করেন বায়োচার। তার দাবি এসব বায়োচার ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার নিজের আলুর খেতে এবং পানের বরজে ব্যবহার করে তিনি ভালো ফল পেয়েছেন।

আদুরী বেগমের দেখাদেখি এলাকার অনেকেই বিভিন্ন সবজি ও পেঁয়াজের খেতে ব্যবহার করছেন বায়োচার। ব্যবহারকারীরা বলছেন, বায়োচার ও কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করায় জমিতে সেচ ও রাসায়নিক সার কম দিতে হচ্ছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের উৎপাদন বাড়ে। তাই দিনদিন বায়োচার প্রযুক্তিতে বাড়ছে ফসলের চাষাবাদ।

স্থানীয় কৃষক ময়নুল ইসলাম জানান, জমিতে বায়োচার সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করায় মরিচ গাছ বেশ সতেজ ও গাঢ় সবুজ হয়েছে। ফুল ও মরিচ ধরেছে তাড়াতাড়ি, ডগাও বেশ মোটা। আর প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষের জমির মরিচ গাছ অনেকটা ফ্যাকাসে, ডগাও সরু, ফুল ধরেছে কম, এখনও মরিচ ধরেনি।

কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বায়োচার ব্যবহার করলে জমির মাটি ভালো থাকে, ফল ভালো হয়, গাছ তরতাজা থাকে।

মান্দা উপজেলার হাজী গোবিন্দপুর গ্রামের প্রদর্শনী প্লট ও কৃষি বন্ধু চুলায় বায়োচার উৎপাদন পরিদর্শন করেন নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (সম্প্রসারণ) গোলাম ফারুক হোসেন, মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন সিসিডিবির বায়োচার প্রজেক্টের কৃষ্ণ কুমার সিংহ, মার্কেটিং অফিসার মালিহা আক্তার, সিপিআরপির সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আওসার আল মামুন, ইয়ুথ প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ম্যানেজার নুসরাম জাহান।

মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, জমিতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত জৈব পদার্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে আমাদের জমিতে অনেক কম পরিমাণ জৈব পদার্থ আছে। সেক্ষেত্রে আমরা কৃষি বন্ধু চুলায় উৎপাদিত বায়োচার বা কার্বন সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করতে পারি। এতে কৃষকরা আশা করি উপকৃত হবেন।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (সম্প্রসারণ) গোলাম ফারুক হোসেন বলেন, বায়োচার একবার জমিতে ব্যবহার করলে শতশত বছর পর্যন্ত মাটিতে উপস্থিতি বজায় রাখতে সক্ষম। এতে মাটির উর্বরতা বাড়ে। তাই রান্নার পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বায়োচার ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।