গাছে গাছে আগাম মুকুল, পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা

শেষ সময়ে কুয়াশার সঙ্গে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তবে বসন্তের আগমনী সঙ্গীত বাজিয়ে জেগে উঠেছে আমের মুকুল। এমন অবহাওয়ায় কুয়াশার কারণে মুকুলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন আম চাষিরা। তারা বলছেন, কুয়াশায় আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, আমের মুকুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ এখনও সব গাছে মুকুল আসেনি। আর পুরোদমে মুকুল আসার সময় শীত কেটে যাবে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানা গেছে, জেলায় ১৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এরমধ্যে বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় ৭০ শতাংশ আম চাষ হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আম পুরো জেলায় চাষ হয়। আম চাষের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, রাজশাহীর বুধপাড়া, মেহেরচন্ডি, পবার হরিয়ান, বায়া, নওহাটা, কুখুন্ডি, কাটাখালী, শ্যামপুর এলাকায় আমের গাছে আগাম মুকুল এসেছে। এর মধ্যে পবার পরিলায় বেশ কিছু বাগানে পরিচর্যা করতে দেখা গেছে কৃষকদের।

আম চাষি আবের আলী জানান, বাগানে ২৭টি আমের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে ১৭ থেকে ১৮টি গাছে আমের মুকুল এসেছে। সব গাছেই কীটনাশক দিচ্ছেন। বাকিগুলোতে মুকুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

আশরাফের মোড় এলাকায় ব্যবসায়ী আবদুস সালাম বলেন, এবার তিনটা বাগান কিনেছি। নওহাটার বাগানে ভালো মুকুল এসেছে। বায়া ও খড়খড়ির বাগানে হালকা মুকুল এসেছে। তবে আশা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মুকুল আসবে। নওহাটার বাগানে গোধ হরমন জাতীয় কীটনাশক দেওয়া হয়েছে, যাতে মুকুলগুলো নষ্ট না হয়।

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের শফিকুল ইসলাম মুকুট বলেন, কিছু কিছু আম গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে। এখন গাছের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তাই ছোট-বড় আম বাগান পরিচর্যায় সময় ব্যয় করতে হয়। এছাড়াও বাগানের আগাছা পরিষ্কারসহ পোকা দমনে স্প্রে করা হচ্ছে কীটনাশক। এতে পোকা যেমন দূর হবে, তেমনি গাছে দেখা দেবে স্বাস্থ্যকর মুকুল। এতে করে ফলন ভালো হবে বলে আশাবাদী তিনি।

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, পুঠিয়ায় প্রায় এক হাজার ৫৩৫ হেক্টর জমিতে পাঁচ হাজার ৫৫০টি ছোট বড় আম বাগান রয়েছে। পুঠিয়ায় ফজলি, লখনা, গোপালভোগ, আশ্বিনা, হিমসাগর, দুধসরসহ প্রায় ১৫ রকমের বেশি জাতের আম চাষ করা হয়ে থাকে।

পুঠিয়ার বানেশ্বর এলাকার আম চাষি আমিনুল ইসলাম বলেন, অধিক মুনাফার আশায় মৌসুমের আগেই বাগানের যত্ন নেওয়া শুরু করা হয়েছে। এখন ২.৫ ইসি ফিডল্যাম, সালফার শাহেন ও ইমিডাক্লোপ্রিড ইমিসাফি ওষুধ স্প্রে করছি। এতে গাছে বেশি মুকুল আসার সম্ভাবনা থাকে। আর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলনও ভালো হবে।

আম চাষি শামসুল জানান, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত তাদের পক্ষে রয়েছে। তাই ভালো ফলন পাওয়ার আশায় বাগানের পরিচর্যা করছেন তিনি।

পুঠিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শামসুন্নাহার ভূঁইয়া জানান, সামনের দিনগুলোতে আবহাওয়া ভালো থাকলে এবারও আমের বাম্পার ফলন হবে। এ বিষয়ে চাষিদের বাগান পরিচর্যা ওষুধ স্প্রে করার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আর চাষিরাও অধিক ফলনের আশায় সে অনুযায়ী কাজ করছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামসুল হক জানান, আমের মুকুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুকুল আসার আগে, মুকুল পুরোপুরি ফুটলে ও গুটি বাধার পরে কীটনাশক ব্যবহার করতে কৃষকদের বলা হয়ে থাকে। তবে ভিটামিন, গোধ হরমন দেওয়ার দরকার নেই। গাছে পোকা-মাকড় না থাকলে ও গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকলে কীটনাশকের ব্যবহারও প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।