চালের বাজারে অস্বস্তি: বিপাকে নিম্ন আয়ের মানুষ

রাজশাহীতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে কাঁচাবাজারে স্বস্তি ফিরলেও চালের বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চালের দাম উর্ধ্বোমুখী হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখালেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের সময় তেমন রোদ না থাকায় দাম কিছুটা বেশি ছিল। আর বর্তমানে ওপেন এলসির সুযোগ না থাকায় দাম কমছে না। এছাড়া অনেকেই চাল মজুত করেছেন, এটিও চালের দাম বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তবে আগামী বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন ধান উঠলে চালের দাম কমবে।

একটি সূত্র বলছে, চালের বাজার অস্থীতিশীল করার পেঁছনে অসাধু চাল ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ হাত আছে। তারা সিন্ডিকেট করেই মূলত চালের দাম বাড়াচ্ছেন। অথচ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের থেকে এরা কম দামেই চাল কিনছেন।

রাজশাহী মহানগরীর পাইকারি ও খুচরা চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, চালের দাম আগের তুলনায় কেজিতে ১ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারি বাজারে কোনও কোনও চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

আটাশ চাল কেজি প্রতি দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায়। পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি চালের বস্তার দাম দুই হাজার ৯০০ টাকা, যা আগে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতো। মিনিকেটের দাম বেড়ে হয়েছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। পাইকারি বাজারে এর দাম (৫০ কেজির বস্তা) দুই হাজার ৮০০ টাকা থেকে তিন হাজারে ১০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাইকারি বাজারে জিরাশালের দাম ৩০০ টাকা বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৮০০ টাকা (বস্তা)। আর খুচরা বাজারে কেজিতে দুই টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। বাসমতি চালের দাম বস্তাপ্রতি ৬০০ টাকা বেড়ে হয়েছে তিন হাজার ৪০০ টাকা। এতে খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে তিন টাকা। বাসমতি এখন ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। নাজিরশালের দাম এখন ৪০০ টাকা বেড়ে প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার টাকায়। শরণা চালের দাম বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৪০০ টাকা। খুচরা বাজারে নাজিরশালের দাম কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়ে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া গুটি শরণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে।

শুক্রবার (৫ মার্চ) সকালে সাহেববাজারে চাল কিনতে এসেছিলেন আবু সাঈদ। তিনি জানান, তারা মেসে থাকেন। তাদের প্রতিদিনই চাল কিনতে হয়। চালের দাম এখন বাড়তি। সবজির দামটা কম আছে। চালের দামটাও কমা উচিত।

সুন্ময় চাল ভাণ্ডারের মালিক বিনোদগুপ্ত জানান, এখন ধানের দাম বেশি। যে কারণে চালের দামটাও বাড়তি। এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ীরা মজুত করে চালের বাজারটাকে নিজেদের মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছেন। ফলে চালের দাম কমছে না।

তিনি আরও জানান, সরকার ওপেন এলসির সুযোগ দিলে ছোট ব্যবসায়ীরা চাল আনতে পারবে। বড় ব্যবসায়ীদের দ্বারা বাজার নিয়ন্ত্রিত হবে না। তবে সামনে নতুন চাল বাজারে এলে চালের দাম কমবে।

এদিকে, চালের বাজারে এমন অস্বস্তির মধ্যে ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে আছে কাঁচাবাজার। এ দিন বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ২০ টাকা কেজি, বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা, পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, রসুন ৬০ থেকে ৮০ টাকা, আদা ৬০ থেকে ৯০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ থেকে ১২০ টাকা, পেঁপে ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাজর ১৫ থেকে ৩০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ডুমুর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো ২০ থেকে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৩০ টাকা, লাউ ২০ থেকে ২৫ টাকা পিস, মটরশুঁটি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, কলা ২০ থেকে ২৫ টাকা হালি, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা পিস, করলা ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি, কাঁচা মরিচ ৪০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, বরবটি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, লালশাক-পুঁইশাক- সবুজ শাক-পালং শাক ১৫ থেকে ২৫ টাকা আঁটি।

মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা। মুরগির মধ্যে ব্রয়লার ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, লাল লেয়ার ২১০ টাকা, সাদা লেয়ার ১৯০ টাকা, সোনালি ২৮০-৩০০ টাকা, রাজহাঁস ৪৫০ টাকা ও পাতিহাঁস ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

মাছের মধ্যে ইলিশ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, বোয়াল ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, রুই ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা, সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, কই ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, মৃগেল ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা, কালবাউস ১৬০ থেকে ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।