রাজশাহীর বাজারে উঠেছে গোপালভোগ

উন্নত জাতের আম হিসেবে পরিচিত গোপালভোগ রাজশাহীর বাজারে এসেছে। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (২০ মে) থেকেই চাষিরা গোপালভোগ পেড়ে বাজারে তুলেছেন। তবে এ দিন খুব অল্প পরিমাণ গোপালভোগই বাজারে দেখা গেছে।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। সেই হাট এখনও জমে উঠেনি। মহানগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকার ফুটপাতের ওপরেও আমের দোকান সাজানো হয় প্রতি বছর। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে একটি দোকানও দেখা যায়নি। তবে নগরীর রেলগেট এলাকার ফলের দোকানগুলোর মধ্যে কেবল একটি দোকানে গোপালভোগ আম দেখা গেছে। ইশান ফল ভান্ডার নামে এই দোকানের বিক্রেতা মো. সাগর বললেন, ‘আজই (বৃহস্পতিবার) গোপালভোগ এনেছি। তবে বিক্রি কম। দাম নিচ্ছি ৮০ টাকা কেজি।’

নগরীর সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় গিয়ে কয়েকজন বিক্রেতাকে ভ্যানের ওপর আম বিক্রি করতে দেখা গেছে। এর মধ্যে উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তির কাছেই কিছু গোপালভোগ আম ছিল। তিনি জানালেন, ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে গোপালভোগ আম বিক্রি করছেন।

আবদুল মতিন ও মনির হোসেন নামে দুই বিক্রেতা তাদের ভ্যানে গুটি জাতের আম বিক্রি করছিলেন। তারা জানালেন, এখনও গাছে গোপালভোগ পাকেনি। তাই আনেননি। কয়েকদিনের মধ্যে এই আম পাকবে। এখন গুটি আম তারা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

.বৃহস্পতিবার রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে ক্রেতা ও পাইকার কম থাকায় হাটে গোপালভোগের দাম কম ছিল। প্রতি মণ গোপালভোগ আম এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বানেশ্বর হাটে মোট ২৪০টি আড়ৎ আছে। সেখানে এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি আড়ৎ খুলেছে। আরও পাঁজ থেকে সাত দিন পরে হাটে আড়তগুলো খুললে আমের বাজার জমজমাট হয়ে উঠবে। বৃহস্পতিবারও শুধু গুটি ও আচারের আমগুলো বেশি উঠেছে। হাতেগোনা কয়েকটি ভ্যানে গোপালভোগ আম দেখা গেছে।

এদিকে গত ১৫ মে গুটি জাতের আম নামাতে শুরু করেছেন চাষিরা। বাজারে বিকিকিনি চলছে গুটি জাতের আম। তবে এসব আমের চাহিদা কম। উন্নত ও সুমিষ্ট আমের প্রতীক্ষায় ছিলেন ভোক্তারা। সেই প্রতীক্ষার পালা শেষ।

বানেশ্বর বাজারের পাইকার ব্যবসায়ী শাপলা এন্টারপ্রাইজের মালিক তাজুল ইসলাম জানান, গত ১৫ মে থেকে গুটি জাতের আমগুলো উঠছে। বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার অল্প কয়েকটি ভ্যানে গোপালভোগ উঠেছে। পাইকার কম থাকায় কম দামে বিক্রি হয়েছে। ছোট গোপালভোগ এক হাজার ৩০০ আর বড়গুলো এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা মণে বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলার মণিগ্রামের চাষি আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ মে গুটি আমও পাকেনি। তারও দুই-তিন দিন পর গাছে গাছে গুটি আম পাকতে শুরু করেছে। এখন পুরোদমেই গুটি নামানো শুরু হয়েছে। গোপালভোগ গাছে পাকা দেখা দিতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে। তবে নামিয়ে রাখলেও সমস্যা নেই। দু-একদিন পর পাকতে শুরু করবে। তিনি দুই-দিন পরই গোপালভোগ নামাবেন।

গাছেই আমের পরিপক্বতা নিশ্চিত করতে গত কয়েকবছর ধরেই জাতভেদে আম পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী ২৫ মে থেকে লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত নামানো যাবে। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি ও আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা এবং বারি আম-৪ নামানো যাবে। চাষি, ব্যবসায়ী, গবেষক আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যৌথসভায় গত বছর এবং এ বছর জাতভেদে আম নামানোর তারিখগুলো একই নির্ধারণ করা হয়।

এবার আম নামানোর তারিখ এলেও বাজার না জমার কারণ জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলীম বলেন, ‘সময় দু-চারদিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে সময় শুরু হলেও বাজার না জামাটা খুবই ইতিবাচক একটি ঘটনা। আমরা দিন ঠিক করেছি, সময় শুরু হলেও চাষিরা গণহারে আম নামাচ্ছেন না। রাজশাহীর মানুষ যে অপরিপক্ব আম নামান না, এটা তার প্রমাণ। রাজশাহীতে সাতক্ষীরার মতো এপ্রিলেই আগাম আম নামে না। পরিপক্ব আমই এখানকার চাষিরা গাছ থেকে নামাতে চান।’

রাজশাহী কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, জেলায় এ বছর ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। এ বছর হেক্টরপ্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন করে আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আমের উৎপাদন হবে। এর মধ্যে অন্তত ৩০০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির আশা করা হচ্ছে।