স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টিকার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহার বিরুদ্ধে উপজেলাধীন পাঁচ ইউনিয়নে করোনার ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা না করেও বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতর ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনায় জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও অপারেশনাল খরচের জন্য বরাদ্দ দিয়ে বাজেট ঘোষণা করে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ শামসুল হক সে অনুযায়ী অন্যান্য উপজেলার পাশাপাশি বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ১৫টি ওয়ার্ডের জন্য ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন।

এর বিবরণীতে বলা হয়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মোট ১২টি টিমে টিকাদানকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে ২৪ জন কাজ করবেন। প্রতি টিমে চারজন করে মোট ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। খরচের বিবরণীতে সংশ্লিষ্ট সবার আপ্যায়ন, ডিস্ট্রিবিউট পয়েন্ট পর্যন্ত ভ্যাকসিন ও লজিস্টিক পরিবহন ব্যয়, ভিজিট ব্যয়, সুরক্ষা সামগ্রী ব্যয়, অনিয়মিত শ্রমিকদের খরচ এবং অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী ভাতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত অর্থ পাঠালেও ভ্যাকসিনের অভাবে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কোথাও প্রশিক্ষণ ও টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জেলা থেকে শুধুমাত্র উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন আনা-নেওয়াসহ অন্যান্য কিছু খরচ হলেও সঙ্গত কারণেই মোট বরাদ্দের একটা বড় অংশ জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ফেরত দেয়। কিন্তু বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা সব কার্যক্রমের ‘ভুয়া ভাউচার’ তৈরি করে সেগুলো স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দিয়ে বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রতন কুমার সাহা দাবি করেন, ‘আমি নিয়ম মেনে সব কাজ সম্পন্ন করে বিল উত্তোলন করেছি। আমার কাজের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনও অভিযোগ কেউ দিতে পারেনি।’

তবে উপজেলার দয়ারামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও প্রশিক্ষণের কোনও কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি।’

লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাহাব উদ্দিন জানান, ভ্যাকসিনের অভাবে ওই সময় ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও টিকাদান সম্ভব হয়নি। কার্যক্রমগুলো না হওয়ায় বরাদ্দের একটা অংশ ফেরত পাঠিয়েছেন তারা।

সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান জানান, এসব কার্যক্রম না হওয়ায় অন্যান্য উপজেলা থেকে বরাদ্দের টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে।’ তবে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা টাকা ফেরত পাঠিয়েছেন কি-না তাৎক্ষণিক তিনি তা নিশ্চিত করতে পারেননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন বলেন, ‘যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিলো, তা দিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যক্রম বাস্তবায়নের কথা। যেহেতু ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্যক্রম হয়নি, তাই স্যারকে (রতন কুমার সাহা) পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো, শুধুমাত্র যে টাকা খরচ হয়েছে তার বিল করে বাকি টাকা অধিদফতরে ফেরত পাঠাতে। কিন্তু তিনি বিল-ভাউচার তৈরি করে বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করেছেন।’

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, ‘বরাদ্দের বিল উত্তোলন বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাকে কিছু জানাননি। তবে তার দফতরে এমন একটি অভিযোগ এসেছে, যা খুব দ্রুতই তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’