চালের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে জরিমানা-মামলার নির্দেশ

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, ‘আমরা যেমন কৃষক বাঁচাতে চাই, তেমনি নিম্ন আয়ের ভোক্তাকেও বাঁচাতে চাই। তাই বলে ২০১৮ সালের মতো দামে চাল খেতে চাইলে হবে না। ২০১৮ সালের মতো দামে চাল খেতে চাইলে আবারও জিরো ট্যাক্সে (শুল্কমুক্ত) চাল আমদানি করতে হবে। তখন বাজারে ধানের মণ ৫০০-৭০০ টাকায় নেমে যাবে। কৃষক মরে যাবে। কৃষক ও নিম্ন আয়ের ভোক্তা, উভয়কেই বাঁচানোর চেষ্টা করছে সরকার। চালের দাম ঠিক রাখতে অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে জরিমানা ও মামলা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) দুপুরে বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপু (সিএসডি) খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন মন্ত্রী।

আজ একটি দৈনিক পত্রিকায় ‘চাল ব্যবসায় অভিজ্ঞ মন্ত্রী দাম কমাতে পারছেন না’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের সময়ে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।’

ওই প্রতিবেদনকে ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, ‘২০১৮ সালের মতো শুল্কমুক্ত হারে চাল আমদানির সুযোগ করে দিলে অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম ৩০-৩৫ টাকায় নেমে আসবে। ধানের দাম হবে ৫০০-৭০০ টাকা। তখন আজকে চালের দাম বেড়ে গেছে বলে যারা সমালোচনা করছেন, তখন তারাই আবার বলবেন কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ১৭-১৮ সালে যখন ধানের দাম কম ছিল তখন কৃষকরা ধান উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। উৎপাদন অনেক কমে গিয়েছিল। অথচ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত বছর এবং এ বছর ধান উৎপাদন বেড়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে ধানের দাম বেশি থাকার কারণে।’

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘ভোক্তারা যাতে গ্রহণযোগ্য দরে চাল কিনতে পারে সেই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫-১৭ আগস্টের পরই বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি শুরু হবে। আমন ধান ওঠার আগ পর্যন্ত এই আমদানি চলবে। আমন ধান বাজারে এলে কৃষকরা ধানের দাম যেন পান, সেই লক্ষ্যে আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানি ছাড়াও অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরুর কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এক শ্রেণির নব্য মজুতদার তৈরি হয়েছে, যারা আগে কখনও ধান-চালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্য অনেক ব্যবসা বন্ধ থাকায়, যাদের কাছে টাকা রয়েছে তারা ধান-চাল মজুতের ব্যবসা শুরু করেছেন। এমনও অনেক উদাহরণ রয়েছে, একজন শিক্ষক যার কিছু টাকা জমা রয়েছে তিনিও নিজের বাড়িতে কিছু ধান কিনে রেখেছেন। আবার করোনার সময় কাপড়ের ব্যবসা বন্ধ থাকায় অনেক কাপড় ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুতের ব্যবসায় নেমে পড়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত নব্য মজুতদার অবৈধভাবে চাল মজুত করে রাখছেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনায় আজ থেকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। চালের অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা ছাড়াও প্রয়োজনে মামলা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

মন্ত্রীর খাদ্য গুদাম পরিদর্শন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে আদমদিঘী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোতাহার আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।