পানিবন্দি লাখো পরিবার

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে ক্রমেই বাড়ছে নদ-নদীর পানি। যমুনা, ইছামতি, করতোয়া, ফুলজোড় ও বড়ালের পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলের ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। এছাড়া নিচু এলাকার বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ শুরু করেছে। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে এক লাখের বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট ও ব্রিজ ভেঙে যাতায়াতে বেড়েছে দুর্ভোগ। এ অবস্থায় বানভাসি মানুষের এখন একমাত্র ভরসা নৌকাই।

শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক আব্দুল লতিফ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং কাজিপুরের মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

জেলায় যমুনা নদীর সবগুলো পয়েন্টে বেড়ে পানি বিপৎসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় অভ্যন্তরীণ নদ-নদী চলনবিল, ইছামতি, করতোয়া, ফুলজোড়, বড়াল ও হুড়াসাগরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েচে। এ অবস্থায় সিরাজগঞ্জ সদর, কাজিপুর,‌ বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার নদী তীরবর্তী নিমাঞ্চল ও চরাঞ্চলসহ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে হাজারো পরিবার।

দীর্ঘদিন ধরে বসতবাড়ির পানি না নামায় চরাঞ্চলের পানিবন্দি মানুষ নৌকায় এবং উঁচু স্থানে বসবাস করছেন। জ্বালানির অভাবে রান্না করা খাবার, শিশুখাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকটে ভুগছেন তারা। একই সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মানুষ। এরই মধ্যে নদী ভাঙনে অনেক পরিবারের ঘর-বাড়ি, বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বন্যার কারণে অনেক পরিবার ক্ষেতের ফসল ও গবাদি পশুসহ সহায়-সম্বল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, বাড়িতে পানি ওঠার খবর আমরা পাইনি। তবে চরাঞ্চলের প্রায় এক লাখেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য সাড়ে পাঁচশ’ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এছাড়া উপজেলাগুলোতে মোট ১২৫ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ বলেন, পানি বৃদ্ধির কারণে নিম্নাঞ্চলের সাত হাজার ৬২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে ডুবে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ বীজতলা ও বাদাম রয়েছে। পানি নেমে গেলে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী জাকির হোসেন বলেন, যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে নদীর অভ্যন্তরীণ নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। আরও দুই-একদিন পানি বাড়তে পারে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, ইতোমধ্যে জেলায় পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে পাঁচশ’ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এছাড়া উপজেলাগুলোতে মোট ১২৫ টন চাল মজুত রাখা হয়েছে। তবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকা করে বন্যার্তদের মাঝে দ্রুত ত্রাণ বণ্টনের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।