শ্বশুরকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি

বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরকে বাবা বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে চাকরি নিয়েছেন শামীম হোসেন নামের এক মুহুরি। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলা কার্যালয়ে অফিস সহায়ক (পিয়ন) পদে তার চাকরি করার বিষয়টি জানাজানি হলে এ নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি চাকরি পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সেখানে কর্মরতরা।

অফিস সহায়ক শামীম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। বাবার কোটায় উপজেলা মৎস্য অফিসে অফিস সহায়ক পদে কর্মরত শামীমের স্ত্রী ফেনসি খাতুন জানান, তার ভাই নেই। শামীম বাবাকে দেখভাল করেন। তাই শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামীমের শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া বলেন, ‘এতে আপনাদের কী? যা ইচ্ছা করেন।’

অনুসন্ধান ও অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আদালতের সাবেক মুহুরি শামীম হোসেন বগুড়ার কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের মাধববাঁকা গ্রামের মৃত করমতুল্লাহর ছেলে। তিনি সোনাতলা উপজেলার জোড়গাছার বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার মেয়ে ফেনসি খাতুনকে বিয়ে করেন। ফেনসি বাবার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুপচাঁচিয়া উপজেলা মৎস্য অফিসে কর্মরত আছেন। বিয়ের পর মাধ্যমিক পাশ মুহুরি শামীম হোসেন সরকারি চাকরি লাভের আশায় শ্বশুর সোনা মিয়াকে বাবা বানানোর উদ্যোগ নেন। তিনি শ্বশুর পক্ষের সহযোগিতায় তার একাডেমিক
সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা মৃত করমতুল্লাহর স্থলে শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়ার নাম বসান। এমনকি পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টও নিজের অনুকূলে নেন। এরপর তিনি মুহুরির পেশা ছেড়ে সোনা মিয়ার ছেলে সেজে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরে অফিস সহায়কের চাকরি পান। বর্তমানে দুপচাঁচিয়া উপজেলা কার্যালয়ে কর্মরত আছেন।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শামীম হোসেনের (জাতীয় পরিচয়পত্র নং-১০১১৬৫০৫২৮) বাবার নাম পরিবর্তন করে মো. সোনা মিয়া করা হয়েছে। তবে মায়ের নাম জাহানারা বেগম রাখা হয়েছে। বর্তমান ঠিকানা, নারহট্ট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উলট্ট পশ্চিমপাড়া এবং স্থায়ী ঠিকানা মাধববাঁকা, কাহালু।

কাহালু উপজেলার নারহট্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন তালুকদার বেলাল জানান, শামীম হোসেন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাধববাঁকা গ্রামের মৃত করমতুল্লাহর ছেলে। তিনি শুনেছেন, শামীম তার বাবার নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধা শ্বশুরের নাম বসিয়ে সরকারি চাকরি করছেন।

এ বিষয়ে দুপচাঁচিয়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী সাকিউল ইসলাম জানান, তিনি অফিস সহায়ক শামীম হোসেনের বাবা পরিবর্তনের বিষয়টি লোকমুখে শুনেছেন। শামীম প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। তাই তার কিছু করার নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে।

বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, শ্বশুরকে বাবা দেখিয়ে
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি নিয়ে থাকলে অপরাধ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।