বকশিশ কম পেয়ে অক্সিজেন খুলে দিলো ওয়ার্ডবয়, মারা গেলো স্কুলছাত্র

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) ওয়ার্ডবয় চাহিদা অনুযায়ী বকশিশ না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ায় এক স্কুলছাত্রের (১৭) মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) রাতে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর রোগীর স্বজনরা চড়াও হলে আসাদুজ্জামান দুলু নামে ওই ওয়ার্ডবয় পালিয়ে যায়।

ওই স্কুলছাত্রের নাম বিকাশ চন্দ্র দাস। সে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার পুটিমারী গ্রামের বিশু চন্দ্র কর্মচারের ছেলে। স্থানীয় বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো বিকাশ। 

বুধবার সকালে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, বকশিস কম দেওয়ায় হাসপাতালের খণ্ডকালীন কর্মচারী এই অপরাধ করেছে। অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

শজিমেকের উপ-পরিচালক ডা. আবদুল ওয়াদুদ জানান, এ ঘটনায় জরুরি বিভাগের একজন মেডিক্যাল অফিসারের নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন। সত্যতা পেলে দুলুর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ ও স্বজনরা জানান, অভাবের কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতো বিকাশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে বাইসাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। পথিমধ্যে একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। তাকে প্রথমে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাত ১০টার দিকে শজিমেক হাসপাতালে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা।

বিকাশের কাকা শচীন চন্দ্র কর্মকার জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাজ শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অক্সিজেনসহ তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগে নেওয়া হয়। ট্রলি বহনকারী হাসপাতালের কর্মচারী আসাদুজ্জামান দুলু বেডে পৌঁছে দেওয়ার পর ২০০ টাকা বকশিশ দাবি করে। বিকাশের বাবা ১৫০ টাকা দিলে আরও ৫০ টাকার জন্য বাগবিতণ্ডা শুরু করে। এরপর অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে। তাকে মাস্ক লাগাতে অনুরোধ করলে অস্বীকৃতি জানায় দুলু। বাধ্য হয়ে নিজেরা মাস্ক লাগালোর চেষ্টা করেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। এ সময় নাক-মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে বিকাশ মারা যায়। চিকিৎসক এসে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় স্বজনরা দুলুর ওপর চড়াও হলে কর্তব্যরত আনসারদের সহযোগিতায় পালিয়ে যায়।

ছিলিমপুর মেডিক্যাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শামিম হোসেন জানান, রোগী মারা যাওয়ার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। তখন তারা তৃতীয় তলায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এর আগেই অভিযুক্ত পালিয়ে যায়। লাশ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।