আমরা শিক্ষিত বেকার তৈরি করতে চাই না: শিক্ষামন্ত্রী

আমাদের দেশে যে সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষায় আছে, পৃথিবীর খুব কম দেশে এমন নজির রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেছেন, ‘উচ্চশিক্ষার মানুষদের আমরা শিক্ষিত ও সনদধারী বেকার তৈরি করতে চাই না। আমরা চাই, এমন দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে, যারা ভৌগোলিকভাবে এই ছোট দেশটিকে সঠিকভাবে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করবে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, সারা বিশ্বে অবদান রাখবে। বিজ্ঞানমনস্ক, প্রযুক্তিতে দক্ষতার পাশাপাশি মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন সুনাগরিক হবে।’

শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ মাঠে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। সেই বিপ্লবের জন্য আমাদের তৈরি হতে হবে। সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে, তা মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এখনই। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের যে প্রথাগত পদ্ধতি রয়েছে, তার বাইরে এসে নতুনকে আলিঙ্গন করতে হবে। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মতো খোলা মন নিয়ে কাজ করতে হবে।’

দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ার জন্য নিজেদের এখন যে পদ্ধতি রয়েছে তা কিছুটা হলেও পরিবর্তন করতে হবে। অনেক সময় আমরা পরিবর্তন মানতে চাই না। সেটি এখন মেনে নিতে হবে। এখন আর সময় নেই পিছিয়ে পড়ার। আজকের কর্মজগতে কী প্রয়োজন সেটিকে মাথায় রেখে চাহিদা অনুযায়ী কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। কর্মজগতে তাদের কী চাহিদা রয়েছে তা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে হবে। খুব যোগ্য, জ্ঞানী মানুষের যদি সততা, মানবতাবোধ, আদর্শ না থাকে তাহলে আমরা ভালো করতে পারবো না। মানবিক গুণসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) মানুষ গড়ার একটি তীর্থস্থান হবে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে দেশ। সেই গতির সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তার সেই গতিকে যেন আমরা আমাদের কাজ দিয়ে আটকে না দেই, পেছনে টেনে না ধরি। কাজ বেগবান করার জন্য তার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সে জন্য আমাদের শিক্ষায় দিতে হবে সর্বাধিক গুরুত্ব। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় গুণগত মানোন্নয়নে চেষ্টা করতে হবে।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান। তিনি তার রচিত ‘জাতির পিতার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও কর্মময় জীবন’ বিষয়ক প্রবন্ধ সম্পর্কে আলোচনা করেন। অনুষ্ঠানের সম্মানিত অতিথি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহীতে একটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।

রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক মলয় ভৌমিক। অনুষ্ঠানে অতিথিদের নিজের লেখা বই উপহার দেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী-৩ আসনের এমপি আয়েন উদ্দীন, সংরক্ষিত আসনের এমপি আদিবা আনজুম মিতা, রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ক্যাম্পাসে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, শহীদ জোহার মাজার ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তিনি শেখ হাসিনা হলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। বিকালে শিক্ষামন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ে মিলিত হন। এরপর তিনি ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ চত্বরে অনুষ্ঠিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।

শনিবার (৪ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আলোচনা অনুষ্ঠান হবে। এতে আলোচনা করবেন অধ্যাপক মুনতাসির মামুন। এদিন বেলা ৩টা থেকে ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং ৫ ডিসেম্বর রবিবার বেলা ৩টা থেকে ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ চত্বরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরপর ১১ থেকে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ চত্বরে নাট্যোৎসব এবং ১৪ ডিসেম্বর প্রামাণ্যচিত্র ‘বধ্যভূমিতে একদিন’ প্রদর্শিত হবে।