সাঈদীকে চাঁদে দেখার গুজবে তাণ্ডব, শেষ হয়নি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ 

আজ ৩ মার্চ।  মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে এমন গুজব ছড়িয়ে ২০১৩ সালের এদিন জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা বগুড়া শহর ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলায় ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে তিন নারীসহ ১৩ জন নিহত হন। সেই তাণ্ডবের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলাগুলো আজও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। দিনটির কথা মনে পড়লে ভুক্তভোগীরা আজও আঁতকে উঠেন। তারা মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। 

বগুড়ার আদালত ও পুলিশ সূত্র জানায়, ওই তাণ্ডবের মামলাগুলো বিচারাধীন। ৩৯ মামলার চার্জশিট দাখিল হয়েছে। মামলাগুলো সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্যেই আটকে আছে। এজাহার নামীয় দুই হাজার ২৯৭ জন আসামির মধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন ৫৮৭ জন। জামিনে ছাড়া পেয়ে তারা স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। অন্যরা আজও পলাতক।

বগুড়ার পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন জানান, সবকটি মামলার চার্জশিট দাখিল হয়েছে, সাক্ষী চলছিল। গত দু’বছর করোনাকালে সাক্ষীরা আদালতে আসেননি। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বদলি হয়ে যাওয়ায় বিচার কার্যক্রমে বিলম্ব ঘটছে। তিনি আশা করেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত সাক্ষী শেষ করে বিচার কার্যক্রম শুরু করা যাবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ গভীর রাতে জামায়াত-শিবির ও তাদের দোসররা মসজিদের মাইক এবং মোবাইলফোনে প্রচার করেন যে, সরকার গোপনে সাঈদীকে ফাঁসি দিয়েছে। তিনি বেহেশতে চলে গেছেন। সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে। খবরটি প্রচার হলে রাত ৩টার পর থেকে ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন বয়সের শত শত নারী-পুরুষ লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র হাতে রাস্তায় নেমে আসেন। 

গানপাউডার ছিটিয়ে অগ্নিসংযোগ, ককটেলবাজি, লুটপাট ও সন্ত্রাসের সৃষ্টি করা হয়। তালা ভেঙে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।  শহরের শেরপুর সড়কে এসএ পরিবহন, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিসসহ আশপাশের দোকানগুলোতে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদের ভেতরে ঢুকে গান পাউডার ছিটিয়ে অফিসে আগুন দেওয়ারও ঘটনা ঘটে।

শাজাহানপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে সেদিন শাজাহানপুর থানার অস্ত্র লুটপাট রক্ষা পায়।

বগুড়া-১ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মান্নানের শহরের চকলোকমানের বাসভবন, কালিতলায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি আলহাজ্ব মমতাজ উদ্দিনের বাসভবনে আগুন দেওয়া হয়। অল্পের জন্য বাড়ির সদস্যরা রক্ষা পান। জামায়াত-শিবির কর্মীরা বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে গাছ এবং ইট ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও জানমাল রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে নারীসহ ১৩ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হন। সেদিনের এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় পুলিশের পক্ষে ৬৬টি মামলা করা হয়েছিল। আসামি ছিল আড়াই হাজারের বেশি। ফাইনাল রিপোর্ট দেওয়ায় ৩৯টি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। সেদিনের তাণ্ডবে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। জামায়াত-শিবির সন্ত্রাসীরা অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। 

এ অবস্থায় সেদিনের ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে মামলাগুলোর কার্যক্রম শেষ ও জড়িতদের বিচার নিশ্চিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।