বগুড়ায় আ.লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে আহত ২০

বগুড়ার গাবতলীতে বিএনপির সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটূক্তি করাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার দুপুরে এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বিএনপি দাবি করেছে, তাদের চার জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহতদের বগুড়ার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলার জন্য বিএনপি ও আওয়ামী লীগে একে অপরকে দায়ী করছে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরী জানান, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কেউ আহত হওয়ার খবর তাদের কাছে নেই।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত শুক্রবার বগুড়ার গাবতলীতে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনি প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেন। ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি শনিবার রাতে গাবতলী থানায় রনির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। অন্যদিকে, এর প্রতিবাদে রবিবার বেলা ১২টার দিকে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে গাবতলী থানার সামনে এলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শর্টগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

এদিকে এ সংঘর্ষের জের ধরে গাবতলী উপজেলা সদরে দু পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করেন। প্রতিবাদে বিএনপি নেতাকর্মীরা বেলা দেড়টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তারা তিনমাথা মোড়ের দিকে পৌঁছলে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশ বাধা দেয়। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে।

গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফা আবদুর রাজ্জাক মিলু বলেন, ‘বিএনপির সম্মেলনে মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনি প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করেন। তার ধৃষ্টতাপূর্ণ আচরণের জন্য রবিবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। ওই শান্তিপূর্ণ মিছিল উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টনের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। এতে ছাত্রলীগ নেতা সুজন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রয়েলসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।’

বিএনপির নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন, তাদের কমপক্ষে চার জন গুলিবিদ্ধসহ ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধরা হলেন– গাবতলী পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এমআর হাসান, দুর্গাহাটা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আশিক ইসলাম এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মহিলা দল নেত্রী সুরাইয়া জেরিন রনির বক্তব্য তার ব্যক্তিগত। এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’ তিনি আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নেতাকর্মীদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট করেছেন। প্রতিবাদে মিছিল বের করলে পুলিশ গুলি ও লাঠিচার্জ করে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, দু পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে শর্টগান দিয়ে পাঁচ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মামলা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।