৫০ বছর পর হারানো সনদ পেয়ে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান আব্দুল গাফফার

নাটোরের সদর উপজেলার সুলতানপুরে বাসিন্দা আব্দুল গাফফার। মুক্তিযুদ্ধের সময় সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়ার দাবি করেছেন তিনি। তবে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্ত নন। আর এর পেছনে যুদ্ধ পরবর্তী সনদ হারিয়ে ফেলার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে সম্প্রতি বাড়ির পুরনো কাগজ ঘেঁটে সেই সনদ পাওয়ার দাবি করেন আব্দুল গাফফার। এখন তিনি চান রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। 

আব্দুল গাফ্ফার দাবি করেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর নিজ এলাকার সিরাজুলের বাড়িতে আশ্রয় নেয় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা। তাদের সহযোগী হিসেবে তিনি প্রথমে কাজ শুরু করেন। এরপর বালিয়াকান্দি এলাকায় আবুল কমান্ডারের তত্ত্বাবধানে তিনি ৮ দিনের ট্রেনিং নেন। এরপর ঝলমলিয়া, হালতি, জংলীর লেংগুরিয়াসহ বিভিন্ন জায়গায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর নাটোরের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীর নির্দেশে তারা গরুর গাড়িতে করে অস্ত্র  জমা দেন। কিছুদিন পর শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদও দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিলাম ২০ বছরের তরুণ। দেশ স্বাধীনের পর পাই সনদ। ওই সনদটি জমা রেখেছিলাম মায়ের কাছে। এরপর মা আর মনে করতে পারেননি সনদটি কোথায় রেখেছেন। সম্প্রতি বাড়ির পুরনো কাগজ থেকে সেই সনদটি পাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুলতানপুরের পাশের গোকুলপুর এলাকার বাসিন্দা ও মন্তাজ মন্ডলের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা ভাদু মন্ডল বলেন, ‘আমি রাজশাহী অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের সব সুবিধা ও সম্মান পাচ্ছি। দেশ স্বাধীনের পর এলাকায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে গাফ্ফারের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা শুনেছি। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরী তাকে সনদও দিয়েছেন। এছাড়া নাটোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার হাবিবুর রহমানের কাছেও গাফ্ফারের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার কথা শুনেছি। এমন অবস্থায় গাফ্ফারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভুক্ত স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’

হারিয়ে যাওয়া সেই সনদতিন ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা আব্দুল গাফ্ফারের এখন দিন কাটে কৃষি কাজ করে। ইতোমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন দুই মেয়েসহ তিন ছেলেকে। অভাবের তাড়নায় দিনমজুরি করে সংসার চালাতে গিয়ে পড়ালেখা করাতে পারেননি কোনও সন্তানকে। তাই বাবার পথ ধরে সন্তানরাও এখন দিনমজুর।

এ বিষয়ে স্থানীয় ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলাউদ্দিন বলেন, গাফ্ফারের বড় ছেলে নূর মোহাম্মদের স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত। বয়সের কারণে মুক্তিযোদ্ধা গাফ্ফারও এখন তেমন কাজ করতে পারেন না। এমন অবস্থায় তাকে তালিকাভুক্ত করে স্বীকৃতি ও সম্মানসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা দিলে বাকি দিনগুলো তিনি ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন। 

আব্দুল গাফ্ফার বলেন, জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছি। এখন শেষ জীবনে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই। চাই মুক্তিযোদ্ধার সম্মাননা। স্বীকৃতি পেতে প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবার সহায়তা চান তিনি।