ছাত্রীকে অপহরণের পর ধর্ষণ, প্রধান শিক্ষক গ্রেফতার

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় ছাত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় ফিরোজ আহমেদ (৪৮) নামে এক প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন হর-তকীতলা গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করেন র‍্যাব-৫ এর সদস্যরা।

ফিরোজ আহমেদ উপজেলার নাজিরপুর মরিয়ম মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি উপজেলা বিএনপির সাবেক নেতা এবং একই এলাকার গোলাম মোস্তফার ছেলে। ভুক্তভোগী ওই বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষককে গ্রেফতারের বিষয়টি বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নাটোর র‍্যাব অফিসের কোম্পানি কমান্ডার এএসপি ফরহাদ হোসেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১ অক্টোবর ওই শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষা ছিল। এদিন পরীক্ষা শেষে তাকে হল থেকে ডেকে মাইক্রোবাসে তুলে রাজশাহীতে আগে থেকে ঠিক করে রাখা একটি বাসায় নিয়ে যান ফিরোজ আহমেদ। এরপর দুই জন অস্ত্রধারী তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, ‘ফিরোজের সঙ্গে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত থাকতে হবে’। সেই সঙ্গে বলতে হবে, ‘সে (ভুক্তভোগী) নিজ ইচ্ছায় তার (ফিরোজ) সঙ্গে এসেছে। তাদের এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে’। এগুলো না বললে তাকেসহ তার বাপ-দুলাভাইকে মেরে ফেলার হুমকির দেন তারা। সেই সঙ্গে তাদের বাড়িঘরও পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এরপর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে ভুক্তভোগীর বাবা-চাচাদের মারধর করেন ওই শিক্ষক। তার বাবারা থানায় গেলে তাকে নিয়ে অন্য এক বাসায় চলে যান। এরপর ওই বাসায় তাকে ভয় দেখিয়ে তিন বার ধর্ষণ করেন ফিরোজ।

এদিকে অপহরণের অভিযোগে ১ অক্টোবর থানায় ওই শিক্ষক ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। পরদিন বেলা ১১টায় ভুক্তভোগী নিজ এলাকায় পৌঁছালে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় আসামিরা পালিয়ে যায়। এরপর ভুক্তভোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

ভুক্তভোগীর বাবা জানান, একজন প্রধান শিক্ষক হয়ে তার মেয়ের যে ক্ষতি করেছেন তা অপূরণীয়। ফিরোজ আহমেদ গ্রেফতার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে তার সহযোগী অন্য আসামিদেরও গ্রেফতার ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান তিনি।

গুরুদাসপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ জানান, ফিরোজ আহমেদ আগের কমিটিতে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। তবে বর্তমান কমিটিতে তিনি নেই। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ফিরোজকে গ্রেফতারের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে গুরুদাসপুর মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ওয়াহেদুজ্জামান জানান, ইতোমধ্যে ওই বিদ্যালয়ের এসএসসি কেন্দ্র সচিবের দায়িত্ব থেকে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়েছেন উপজেলা পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আক্তার হোসেনসহ তিনিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ সভাপতি আব্দুল হাই জানান, ওই ঘটনার পর পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিরোজ আহমেদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিনিয়র শিক্ষক ফরিদা খাতুনকে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত আড়াই শতাধিক ছাত্রী রয়েছে। ওই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। 

গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মতিন ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাজহারুল ইসলাম জানান, ওই শিক্ষককে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।