প্রথমবার ইতালিতে যাচ্ছে রাজশাহীর পেয়ারা-কুল

আমের পর এবার প্রথমবারের মতো রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের পেয়ারা ও কুল যাচ্ছে ইতালি। বাঘার দুই কৃষকের কাছ থেকে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধমে প্যাকেজিং করে এক হাজার কেজি পেয়ারা ও ১০০ কেজি কুল ইতালিতে পাঠানো হয়েছে। বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সাদি এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় থেকে পেয়ারা ও কুলের প্রথম চালান ঢাকায় পাঠানো হয়।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লা সুলতান বলেন, ‘গত পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাঘার আম রফতানি হচ্ছে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স ও রাশিয়ায়। ফরমালিন ও কেমিক্যালমুক্ত আম ইতোমধ্যে সুনাম বয়ে এনেছে। আমের পর এবার রফতানি হচ্ছে পেয়ারা ও কুল।’

সোমবার বাঘা উপজেলা থেকে ঢাকার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স আদাব ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম ছানা ৫০০ কেজি পেয়ারা রফতানি করেন ইতালিতে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একই কোম্পানির মাধ্যমে শফিকুল ইসলাম ছানা আরও ৫০০ কেজি পেয়ারা পাঠান। এছাড়া বাঘা উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের কৃষক শাহিন ইকবালের বাগান থেকে রফতানি হয় ১০০ কেজি থাই কুল। সবগুলো বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলে চাষ করা হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লা সুলতান বলেন, ‘রফতানিকারকদের কাছে বাঘা উপজেলার দুই কৃষক ৮০ টাকা কেজি দরে পেয়ারা ও ১০০ টাকা কেজি দরে কুল বিক্রি করেছেন। স্থানীয় বাজারে পেয়ারার কেজি ৪০ টাকা ও কুল ৬০-৭০ টাকা। রফতানিকারকদের কাছে তারা বেশি দাম পেয়ে খুশি। কৃষকদের সঙ্গে রফতানিকারকদের যোগাযোগসহ সব সহযোগিতা করেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে সারা বছর বিভিন্ন ফলের চাষ হয়। এর মধ্যে কুল হচ্ছে অন্যতম সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। দেশের প্রায় সব জেলায় কমবেশি কুল চাষ হয়। তবে রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, বগুড়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে ভালো এবং উন্নতজাতের কুল চাষ হয়। এদিক থেকে স্বাদে-গুণে ভরপুর বাঘার কুল। উপজেলা থেকে আমের পর এবার রফতানি শুরু হয়েছে পেয়ারা ও কুল।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউজে পেয়ারা ও কুলগুলো মোড়কজাত করা হবে। তারপর কার্গো ফ্লাইটে এসব পেয়ারা ও কুল ইতালিতে যাবে। প্রথম চালানে অল্প পরিমাণ পেয়ারা ও কুল পাঠানো হয়েছে। আরও বেশি যেন রফতানি করা যায়, সেজন্য বিভিন্ন রফতানিকারকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বাঘার চরাঞ্চলে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে বছরের পর বছর হাজার হাজার বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে থাকতো। মৌসুমি ফসল ছাড়া কোনও চাষাবাদ হতো না। 

এ বিষয়ে সাদি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম ছানা বলেন, ‘৫০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষ করেছি। এর মধ্যে বাঘার পলাশীর চরে ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা হয়েছে। একসময় চরের বালু জমিতে কোনও আবাদ হতো না। এসব জমি ইজারা নিয়ে ধীরে ধীরে পরিচর্যা করে আবাদি করে তুলেছি। এখন এসব জমিতে আম, কুল ও পেয়ারা চাষ হচ্ছে। ফলনও ভালো হচ্ছে। চরের এসব জমিতে পেয়ারা ও বরই চাষ হওয়ায় অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। একশ্রেণির মানুষ আধুনিক চাষ শিখেছেন। রফতানির উপযোগী আম, পেয়ারা ও কুল উৎপাদিত হচ্ছে। এজন্য উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা করা হয়। গত মৌসুমে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে ৩০ মেট্রিক টন আম পাঠিয়েছি। প্রথমবার পেয়ারা ও কুল রফতানি করছি।’