শিশু হত্যার পর লাশ গুম: দুজনের মৃত্যুদণ্ড, একজনের যাবজ্জীবন

বগুড়ার শাজাহানপুরে পারিবারিক শত্রুতার জেরে পাঁচ বছরের শিশু রোমানকে হত্যা ও লাশ গুমের দায়ে দুইজনের মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। 

সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বগুড়ার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন এ রায় দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুজন পলাতক রয়েছেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বগুড়ার শাজাহানপুরের ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুল খালেক ও একই উপজেলার চোপীনগর দক্ষিণপাড়ার আবদুল মাজেদ। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হলেন ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক।

আদালত ও এজাহার সূত্র জানায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ক্ষুদ্র কুষ্টিয়া গ্রামের শিশু রোমানের দাদার সঙ্গে আসামি খালেক ও মাজেদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এছাড়া উভয় পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। তারা এসবের জেরে রোমানকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ২০১১ সালে ২৩ আগস্ট রাজ্জাকের মাধ্যমে চকলেটের প্রলোভনে রোমানকে ডেকে নেন তারা। বিনিময়ে রাজ্জাককে আট হাজার টাকা বকশিশ দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে খালেক ও মাজেদ শ্বাসরোধে শিশুটিকে হত্যার পর লাশ গুম করেন। 

রোমান নিখোঁজের পর খালেকের আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি ঘটনা ফাঁস করেন। এছাড়া তিনি মাজেদ ও রাজ্জাকের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে, পুলিশ পাঁচদিন পর ২৮ আগস্ট প্রতিবেশী খলিলের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে রোমানের পচন ধরা মরদেহ উদ্ধার করে। 

এ ব্যাপারে শিশুর বাবা মাহবুবুর রহমান শাজাহানপুর থানায় হত্যা ও লাশ গুমের মামলা করেন। পরে আসামিরা জামিনে ছাড়া পান।

আদালতের অতিরিক্ত পিপি জহুরুল ইসলাম জানান, আসামি খালেক ও মাজেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক হয়। এরপর থেকে তারা পলাতক। সোমবার দুপুরে শুধু আসামি রাজ্জাক উপস্থিত হন। বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন ঘটনার এক যুগ পর রায় ঘোষণা করেন।  

বাদী পক্ষের সাবেক আইনজীবী আবদুল লতিফ পশারী ববি বলেন, ‘তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজ্জাকের বিরুদ্ধে ফাইনাল রিপোর্ট (দায় থেকে মুক্তি) দিয়েছিলেন। পরে তথ্যউপাত্ত দিয়ে মামলা পরিচালনা করায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। এ রায়ে আমি সন্তুষ্ট।’