‘হঠাৎ শুনি বাজান আর নাই, আমি কী নিয়া বাঁচবো’

‘আমার বাবা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে আসছিল। ছুটি শেষ হওয়ার আগেই চইল্লা গেছিল। হঠাৎ শুনি বাজান আর নাই। আমি এখন কী নিয়া বাঁচবো।’ ছেলের নাম ধরে বিলাপ করতে করতে করলে কথাগুলো বলছিলেন বান্দরবানে নিহত সেনাসদস্য তৌহিদুল ইসলামের মা নাসিমা বেগম। মঙ্গলবার (১৬ মে) রুমা উপজেলায় সেনাবাহিনীর টহল দলের ওপর কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) হামলায় তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।

বুধবার (১৭ মে) দুপুরে কেএনএ সন্ত্রাসীদের বোমা বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিতে নিহত হন দুই সেনাসদস্য রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম ও নোয়াখালীর সদর উপজেলার আলতাফ হোসেন মাছুম

তৌহিদুল বাগমারা উপজেলার নরদাশ ইউনিয়নের নরদাশ গ্রামের মহসিন আলীর ছেলে। আজ বিকাল ৫টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। সেনাবাহিনীর একটি দল তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদর্শন করে।

এর আগে বিকাল ৪টার দিকে লাশ আনা হয় বাড়িতে। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশ দেখে বাবা মহসিন ও মা নাসিমা বেগম বারবার মূর্ছা যান। পরিবারের একমাত্র উপার্জন করা ব্যক্তির মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাকে একনজর দেখার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে।

তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম আবু সুফিয়ান, মেজর হাসান, নরদাশ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ গোলাম সারোয়ার আবুলসহ বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।

ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সারোয়ার আবুল বলেন, তৌহিদুল ভদ্র ও বিনয়ী ছিল। সে আমার ছাত্র ছিল। তাকে হারিয়ে পরিবার ভেঙে পড়েছে। তার পরিবারের পাশে আমরা রয়েছি।

মেজর হাসান বলেন, তৌহিদুল খুবই ভালো ছিল। নানা কর্মকাণ্ডে তার সুনাম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তার পরিবার সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা পাবে।

বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএফএম আবু সুফিয়ান বলেন, নিহতের পরিবারের পাশে সর্বদা আছি। সরকারিভাবে সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানায়, তৌহিদুলের বড় বোনের কয়েক বছর আগে বিয়ে হয়েছে। ২০২০ সালে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে যোগ দেন। এরপর থেকে প্রতি মাসে পরিবারের জন্য টাকা পাঠাতেন। তার আয়েই চলছিল সংসার।

উল্লেখ্য, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রুমা উপজেলার সুংসুংপাড়া সেনা ক্যাম্পের আওতাধীন জারুলছড়িপাড়া নামক স্থানে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আস্তানার খবর আসে। এ সংবাদ পেয়ে সুংসুংপাড়া আর্মি ক্যাম্প থেকে মেজর মনোয়ারের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল মঙ্গলবার সেখানে যায়। দলটি জারুলছড়ি পাড়ার পানির ছড়ার কাছাকাছি পৌঁছালে দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কেএনএ’র আইইডি বিস্ফোরণ ও অতর্কিত গুলিবর্ষণের মুখে পড়ে। এতে দুই সেনাসদস্য ও দুই কর্মকর্তা আহত হন। তাদের উদ্ধার করে দ্রুত হেলিকপ্টারে চট্টগ্রামের সিএমএইচে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুই সৈনিক মারা যান। আহত দুই কর্মকর্তা ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।