উপকার করতে গিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক, পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত

জাতীয় জরুরি সেবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে উপকার করতে গিয়ে এক বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীর (২৩) সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়েছেন বগুড়ার শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিঠুন সরকার। ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় গত ৯ আগস্ট ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। সোমবার (১৪ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’

তবে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া এসআই মিঠুন সরকার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘সম্পর্ক নিয়ে আমাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। পরে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। শেরপুরের মির্জাপুরের বাসিন্দা তিনি। দুই বছর আগে একটি জাতীয় দৈনিকের পাঠক ফোরামের সদস্য থাকাকালে একই সংগঠনের এক সদস্যের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তার। পরে বিয়ে করেন। কিন্তু বনিবনা না হওয়ায় এক বছরের মাথায় বিচ্ছেদ হয়। সাবেক স্বামী অন্যত্র বিয়ে করেন। এরই মধ্যে বিয়ের কথা গোপন করে আবারও ছাত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। সেইসঙ্গে একত্রে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন। কিছুদিন পর ছাত্রীর কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে যোগাযোগ বন্ধ করে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। পরে টাকার জন্য তার বাড়িতে যান ছাত্রী। এসব নিয়ে শেরপুর থানা পুলিশের মধ্যস্থতায় বৈঠক হলেও কোনও সুরাহা হয়নি।

পুলিশ জানায়, সাবেক স্বামীর কাছ থেকে পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য কয়েক মাস আগে সহযোগিতা চেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেন ছাত্রী। তখন শেরপুর থানার এসআই মিঠুন সরকার ছাত্রীর বাড়িতে যান। সহযোগিতার নামে নিজের নাম-পরিচয় গোপন করে প্রথমে প্রেমের এবং পরে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিয়ের কথা বললে অস্বীকৃতি জানান মিঠুন। এ নিয়ে গত ২২ জুলাই জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী। পুলিশ সুপার বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় গত ৮ আগস্ট মিঠুন সরকারকে আদমদীঘি থানায় বদলি করা হয়। ৯ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার বিশ্বাস ও আদমদীঘি থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা অভিযুক্ত এসআই মিঠুন সরকারের সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করলেও এ ব্যাপারে কিছু বলতে রাজি হননি তারা।

তবে শেরপুর থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, অর্থের বিনিময়ে ওই ছাত্রীর সঙ্গে মিঠুন সরকারের আপস-মীমাংসা হয়েছে। এরপরও বিভাগীয় শাস্তি হিসেবে মিঠুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী ছাত্রীর মোবাইল নম্বরে সোমবার সকালে একাধিকবার কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।