ভোজনরসিক সেই বাবুল মারা গেছেন

এক বসায় ১৮ কেজি মাংস ও ১০০ ডিম খাওয়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ‘খাদক’ বাবুল আক্তার (৫০) না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১১টায় নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গঙ্গারামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়। বাবুল আক্তার বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত খেলাফত উল্লাহ সরকারের ছেলে। দীর্ঘদিন থেকে কিডনি ও হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।

জানা গেছে, ২০১৮ সালে বাবুল আক্তার ১৮ কেজি খাসির মাংস এবং ১০০ মুরগির ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। তিনি খেতে বসলে ২০ থেকে ২৫ কেজি ওজনের একটি কাঁঠাল নিমিষেই শেষ করতে পারতেন। দ্রুতগতিতে ১১ মণ ওজনের কাঠের গুল একাই কাঁধে তুলে নিয়ে বহন করতেন। এক দৌড়ে ১৫-২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতেন অনায়াসেই। একটানা চার ঘণ্টা সাঁতার কেটেও ক্লান্তিবোধ করতেন না। ১২৫ কেজি ওজনের বিশাল দেহ নিয়ে অনায়াসে গাছে উঠে ডাব পেড়ে খেতেন। তবে কারও সঙ্গে বাজি ধরেই এসব কাজ করতেন।

বাবুলের স্ত্রী লাইলা বেগম বলেন, শাশুড়ি বলতেন সে ১৯৭৩ সালে জন্মের পরপরই নাকি পৌনে এক কেজি করে গরুর দুধ পান করতেন। এরপর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি আরও বেশি খাবার লাগতো। তিনি প্রাপ্ত বয়সে প্রতিদিনের সকালের নাশতায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস খেতেন। তা না হলে ২৫ থেকে ৩০টি মুরগির ডিম দিয়ে নাস্তা করতেন। এটা ছিল তার স্বাভাবিক খাবার। আর কেউ বাজি ধরলে তো কোনও কথাই নেই। ১০ থেকে ১৫ কেজি মাংস ও ৫০ থেকে ১০০ ডিম খেয়ে ফেলতেন। বয়স বৃদ্ধির পর শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে চিকিৎসকের কথামতো খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।

মেয়ে যুথী খাতুন বলেন, বাবা একজন শক্তিশালী মানুষ ছিলেন। তার বিশাল দেহ আর অস্বাভাবিক খাওয়ার কারণে নাম হয়ে যায় ‘খাদক বাবুল আক্তার’। তার স্বাভাবিক খাদ্য তালিকায় পাঁচ কেজি গরুর মাংস লাগতো। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার কথা ভেবেই খাদ্য কমিয়ে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া সুস্থতার কথা ভেবে পরিবারের সদস্যরাও সেভাবে আর খেতে দিতেন না।

ছেলে নবাব আলী বলেন, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনে প্রথম তার বন্ধুদের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়েছিলেন। ওই দিন রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ‘ভূত রেস্তোরাঁ’ নামের একটি হোটেলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে ভূত রেস্তোরাঁয় শতাধিক লোকের মধ্যে ১৮ কেজি খাসির মাংস এবং ১০০ ডিম এক টেবিলে বসে খেয়েছিলেন। এমন অবাক করা খাওয়া দেখে মিডিয়ার নজরে আসেন। ওই সময় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ‘খাদক’ ‘ভোজনরসিক’সহ আরও কত নামে তাকে প্রচার করা হয়।

মনিগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, বাবুল আক্তারের অনেক জমি ছিল। সাংসারিক ছাড়া অন্য কোনও কাজ করতেন না। জমি বিক্রি করে খেয়ে প্রায় শেষ করেছেন। তবে শারীরিক সমস্যার কারণে মৃত্যুর আগে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছিলেন।