রাবির কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের বয়কট সাধারণ শিক্ষার্থীদের

দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতাদর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে কিছুটা ভিন্ন মতাদর্শ নিয়ে আন্দোলন করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের বয়কট করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এখন থেকে রাবিতে কোনও সমন্বয়ক না রেখে সারা দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন রাজশাহী টু ঢাকা রেলপথ অবরোধকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই ঘোষণা দেন অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী বলেন, পূর্বের সমন্বয়কদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বয়কট করেছে। বয়কট করার একমাত্র কারণ হলো, দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় এক মতাদর্শ নিয়ে আন্দোলন করছে, কিন্তু তারা সেই মতাদর্শ থেকে একটু আলাদা হয়ে আন্দোলন করার চেষ্টা করছিল। আজ (বৃহস্পতিবার) সারা দেশে বাংলা ব্লকেড চলছে, সেখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়করা মেরুদণ্ডহীনতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল থেকে কোনও কর্মসূচি ছিল না। একই দিনে আমাদের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়েরা প্রশাসনের দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। সে জন্য ক্ষোভে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের বয়কট করেছে।

সামনের কর্মসূচির বিষয়ে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে যে কর্মসূচি পালিত হবে, আমরাও সেই কর্মসূচি অনুসারেই আন্দোলন করবো। আমরা এখানে কাউকে সমন্বয়ক রাখবো না, কারণ সমন্বয়ক রাখলে একটা খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। যেটা ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। তবে আমরা ভলান্টিয়ারের একটা বড় গ্রুপ রাখবো। তারাই সুসংগঠিত হয়ে আন্দোলন পরিচালনা করবে। পূর্বের কাউকে আমরা নেতৃত্ব দিতে দেবো না। এখানে কোনও প্রকার নেতৃত্ব থাকবে না।

এর আগে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের দ্বারা শিক্ষার্থীরা আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ঝটিকা মিছিলের ডাক দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপরে সেখানে সমবেত হয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের পর বিশ্বদ্যিালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন তারা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে দেশের সব স্থানের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে প্রচণ্ড জোরে বজ্রপাত শুরু হলেও রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা- ‘আমার ভাই আহত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘১৮ এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’সহ কোটা বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিচালনার জন্য পূর্ব থেকে নেতৃত্ব থাকা শিক্ষার্থীরা নিজেরা মিলে ১১ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করেন। সেই সমন্বয়ক কমিটির নেতৃত্বেই গত কয়েকদিন সেখানে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার কোনও কর্মসূচি না দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন এবং দুই দিন জনসংযোগের ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। এর মাঝে বৃহস্পতিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন গত কয়েকদিনের আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজিব। তার ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী সমন্বয়ক কমিটির মধ্যেই সমন্বয় ছিল না।