মৃত্যুর সঙ্গে ৪৯ দিনের লড়াই

শেখ হাসিনার পতনের পর বিজয় মিছিলে গিয়ে ৩৬ গুলি খাওয়া রাতুল মারা গেছেন

বগুড়ায় গুলিবিদ্ধ ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুল ছাত্র জুনাইদ ইসলাম রাতুল (১৫) মারা গেছে। ৪৯ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকার ন্যানশাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে মারা যায়। তার বাবা জিয়াউর রহমান এ তথ্য দিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বগুড়ায় বিজয় মিছিলে অংশ নিতে গিয়ে রাতুল পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হয়।

জানা গেছে, জুনাইদ ইসলাম রাতুল বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার মুদি দোকানি জিয়াউর রহমান জিয়ার ছেলে। সে নিশিন্দারা উপশহরর পথ পাবলিক স্কুল ও কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিল। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের খবরে দেশের বিভিন্ন স্থানের মত বগুড়ায়ও বিজয় মিছিল বের করা হয়। রাতুল বড় বোন কলেজ ছাত্রী জেরিন ও ভগ্নিপতি আমির হামজার সঙ্গে বিজয়
মিছিলে অংশ নেয়। মিছিল শহরের ঝাউতলা এলাকায় পৌঁছলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা সদর থানায় হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ গুলি চালালে রাতুল গুরুতর আহত হয়। তার মাথায় চারটি ছররা গুলি লাগে।

একটি গুলি বাম চোখের মধ্য দিয়ে মাথায় ঢুকে যায়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ছররা গুলিবিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত ও অচেতন অবস্থায় তাকে প্রথমে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ভর্তির পর তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। চিকিৎসকরা খুলির অংশ কেটে মগজ থেকে একটি গুলি বের করেন। এক্স-রে রিপোর্টে তার মাথা, চোখসহ শরীরে শতাধিক গুলি পেয়েছেন চিকিৎসকরা। ৩৬টি গুলি অপসারণ করেছে। এরপর তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে কয়েকদিন আগে ওয়ার্ডের বেডে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, রাতুল বেঁচে গেলেও দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে।

তার বাবা জিয়াউর রহমান জানান, গত কয়েকদিন তার ছেলের অবস্থা ভালো ছিল। কথা বলেছে, খাওয়া-দাওয়া করেছে। রবিবার রাত ৪টার দিকে হঠাৎ তার অবস্থার অবনতি ঘটে। সোমবার সকাল ৬টার দিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে মারা যায়। এ পর্যন্ত ব্যক্তিগত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে। এরপরও ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না।

তিনি আরও জানান, সোমবার বাদ জোহর ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাতুলের প্রথম নামাজে জানাজা হবে। এরপর মরদেহ বগুড়া শহরের সুলতানগঞ্জপাড়া, ঘোনপাড়ার বাড়িতে আনা হবে। দ্বিতীয় জানাজা শেষে নামাজগড় আঞ্জুমান ই গোরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এদিকে সোমবার সকালে তার মৃত্যুর খবর প্রচার হলে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন। পুরো এলাকায় মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।