শুরু হয়নি ধান সংগ্রহ অভিযান

কম দামে ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন পঞ্চগড়ের কৃষকেরা

সরকারিভাবে ঘোষণা করা হলেও পঞ্চগড় জেলার কোথাও বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি। উপজেলা কৃষি বিভাগ এখন পর্যন্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করতে না পারায় বোরো ধান সংগ্রহ অভিযানে শুরুতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি।

জানা গেছে, সরকার চলতি মৌসুমে গত ৫ মে থেকে বোরো ধান সংগ্রহ অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই চিঠি জেলা পর্যায়ে এসে পৌঁছে ৭ মে। এরপর সংগ্রহ অভিযানের চিঠি প্রত্যেকটি উপজেলায় পাঠানো হয়। চিঠি পাওয়ার পর প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটি গঠন করা হয়। উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটির সভাপতি হলেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার। কিন্তু এখন পর্যন্ত জেলার পাঁচ উপজেলার কোথাও কৃষকদের তালিকাও প্রস্তুত করা হয়নি এবং উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটির কাছেও জমা হয়নি।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার পাঁচ উপজেলায় ৪ হাজার ৬৪৯ মেট্রিক টন বোরো ধান সংগ্রহের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আটোয়ারী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আফতাব হোসেন জানান, গত ৭ মে চিঠি পেয়েছি। গত ১৭ মে উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ইউনিয়নওয়ারি বরাদ্দ বিভাজন করে কৃষকদের তালিকা চাওয়া হয়েছে। গত ২০ মে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের তালিকা জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও তালিকা পাইনি। তালিকা অনুমোদন হলে খাদ্য বিভাগ ধান সংগ্রহ শুরু করবে।

দেবীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. এমদাদুল হক জানান, গত ১৮ মে উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এখানকার কৃষি কর্মকর্তা ঢাকা গেছেন। তিনি এলে কৃষকদের তালিকা করা শুরু হবে। ৩৩ হাজার কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তালিকা জমা হবে। তারপর শুরু হবে সংগ্রহ অভিযান।

খাদ্য বিভাগের একটি সূত্র জানায়, কৃষকদের তালিকা তৈরিই শেষ কথা নয়, খাদ্য সংগ্রহ অভিযান কমিটির যত আনুষ্ঠানিকতা ও জটিলতা এটা শেষ হয়ে কবে নাগাদ সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে তা বলা মুশকিল। কারণ কৃষি বিভাগ তালিকা জমা দেওয়ার পর উপজেলা সংগ্রহ কমিটি যাচাইবাছাই করে কৃষক নির্ধারণ করবেন। এসব কৃষকদের তালিকা ক্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর পর সংশ্লিষ্ট উপজেলার ক্রয় কর্মকর্তা কৃষি সহায়তা কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে ধান ক্রয় করবেন। চলতি মৌসুমে সরকার ২৩ টাকা দরে প্রতি কেজি ধান সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছেন। ৫ মে থেকে শুরু করে সংগ্রহ অভিযান ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার মেট্রিক টন। বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও কৃষকদের মুখে হাসি নেই। সরকার ঘোষণা দিলেও ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু না হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

জানা গেছে, পাওনাদারের চাপ, মহাজনের ঋণের টাকা আর শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে কৃষকদের বাধ্য হয়েই কমমূল্যে বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে ধানের যে দাম তাতে কৃষকদের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচই উঠছে না। এ সুযোগে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা কম দামে ধান কিনে মজুদ করছেন।

কৃষকরা বলছেন, সরকার যখন ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে তখন কৃষকদের পরিবর্তে ধান সরবরাহ করবেন দালালেরা। সরকার জেনেশুনেই দেরিতে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে বলেও অভিযোগ তাদের।

জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার ভাউলাগঞ্জ এলাকার কৃষক আসলাম হোসেন জানান, কৃষকরা ধান তুলে বিক্রি শেষ করার পর সরকার সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। ফলে চিরজীবন কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। বাজারে ধানের দাম মাত্র চারশ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা। এত কম দামে ধান বিক্রি করে কিভাবে আমরা চলব তাই ভাবছি।

জেলার বোদা উপজেলার ভাসাইনগর এলাকার কৃষক দাইমুল ইসলাম জানান, ধারের কারণে আমরা চরম বিপাকে রয়েছি। বাজারেও ধানের দাম কম। সরকারিভাবেও ধান ক্রয় শুরু হয়নি। সবদিক দিয়েই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

জেলার সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের ডুডুমারি এলাকার কৃষক মফিজুল ইসলাম জানান, সার, কীটনাশক, বীজের দাম বেশি। অতিরিক্ত দামেও ডিজেল কিনতে হচ্ছে। কিন্তু বোরো ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। ধান পাকার মুহূর্তে সরকারিভাবে ক্রয় শুরু করলে কৃষকরা সরাসরি ধান দিতে পারত। এতে কৃষকরা লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেত।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আব্দুল কাদের জানান, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে সংগ্রহ অভিযান কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি বিভাগকে কৃষকদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে সংগ্রহ অভিযান কমিটি অনুমোদন দিলেই ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বোরো ধান ক্রয় অভিযান শুরু হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আরও পড়ুন: মায়ের কোলে খেলছে রোয়ানু

/এমও/টিএন/