রংপুরে বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়ার্কশপে আগুন: দাহ্য পদার্থ থাকলেও নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না

রংপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড রংপুর নগরীর শাপলাচত্বর এলাকায় বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের কার্যালয়ের ওয়ার্কশপে আগুনে বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারসহ বিভিন্ন সামগ্রী পুড়ে গেছে। তবে এমন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়ার্কশপে ছিল না কোনও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমারের মধ্যে দাহ্য পদার্থ (এক ধরনের তেল) রয়েছে এবং যে কোনও সময় আগুন ধরতে পারে তা জানা সত্ত্বেও অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না সেখানে।  এ কারণে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করেছেন এলাকাবাসী, ব্যবসায়ীসহ খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরাও।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারী অভিযোগ করেন, কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিতেই এ ঘটনা ঘটেছে। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলে আগুন এতটা ছড়াতে পারতো না।  যেভাবে আগুন ছড়িয়ে পড়ছিল তাতে আশপাশের ব্যাংক, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের শতাধিক দোকান এবং কয়েকটি বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। তবে ফায়ার সার্ভিসের প্রচেষ্টায় আগুন ওয়ার্কশপের বাইরে ছড়াতে পারেনি।

রংপুর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের গোডাউনে আগুনএকই কথা জানালেন ওই এলাকার ব্যবসায়ী মমতাজ মিয়া, আবেদুল সাত্তারসহ অনেকে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এ রকম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়ার্কশপ রাখা নিরাপদ নয়। এছাড়া তাদের অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা যে নেই তাও তারা জানতেন না।

এদিকে, বৃহস্পতিবার আগুন কীভাবে লেগেছে, নাকি কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা মুখ খুলতে রাজি হননি। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারাও আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু জানাতে পারেননি।

ঘটনা তদন্তে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শংকর কুমার দেবকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। দুটি কমিটি গঠনের কথা স্বীকার করেছেন বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মর্তুজা।

ওয়ার্কশপে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না বিষয়টি স্বীকার করে গোলাম মতুর্জা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ধারণা করা হচ্ছে। ওয়ার্কশপে ২৫ থেকে ৩০টি ট্রান্সফরমার ছিল। সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলেও প্রয়োজনীয় মেরামত করে আবার সচল করা সম্ভব বলে জানান তিনি।

রংপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ পরিচালক আসাদুজ্জামান শেখ জানান, ভোর সাড়ে ৫টায় আগুন লাগার খবর পেয়ে তারা নিজেদের পাঁচটি ও পাশেই হারাগাছ থেকে একটি ইউনিট নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছেন তারা।  

তবে আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তদন্ত করে এ বিষয়ে জানানো হবে।

/বিএল/এফএস/

আরও পড়ুন- মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি: বুধবার রাত থেকেই দিন গণনা শুরু