হেলমেট না পরলে চলবে না মোটরবাইক!

রিয়াত শিক্ষার্থীদের তার উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দেখাচ্ছেহেলমেট পরে মোটরসাইকেল চালানোর আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। জরিমানা ও মামলার ভয় দেখিয়েও কাজ হয় না। হেলমেট ব্যবহারে বাধ্য করা যায় কিনা- এমন চিন্তা থেকেই নতুন একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র। তিনি এ প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’। এই সিস্টেমে চালক হেলমেট না পরলে কোনোভাবে মোটরসাইকেল স্টার্ট করা যাবে না। এমনকি নেশাগ্রস্ত অবস্থাও মোটরসাইকেল চালানো যাবে না। যেহেতু হেলমেট ছাড়া বাইক স্টার্ট হবে না, তাই চুরি হওয়া থেকেও রক্ষা করা যাবে।

কুড়িগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র মতিউর রহমান রিয়াত এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছেন। তার বাড়ি দিনাজপুরে। তার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। সোমবার (৩০ অক্টোবর) রিয়াতের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।

রিয়াত বলেন, ‘এ প্রযুক্তিতে মোটরসাইকেলের  নির্দিষ্ট স্থানে একটি ডিটেক্টর বসানো থাকবে, যা ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে হেলমেটে বসানো একটি ডিভাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। চালক ওই নির্দিষ্ট হেলমেট না পরলে বাইক চালু হবে না। হেলমেট ছাড়া বাইক স্টার্ট করতে চাইলে বাইক থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বারবার বলা হবে ‘বাইকটি সক্রিয় করতে অনুগ্রহ করে হেলমেট ব্যবহার করুন’। একইসঙ্গে ডিসপ্লেতে লেখা উঠবে ‘হেলমেট ব্যবহার আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে (Please put on your helmet)’। বাইকের ডিভাইসটি বাইক থেকে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করবে। হেলমেটের ওপর থাকা সোলার কোষ থেকে হেলমেটের ডিভাইসটি বিদ্যুৎ পাবে। এছাড়া পেনসিল ব্যাটারি ব্যবহার করেও হেলমেটের ডিভাইসটি সচল রাখা যাবে।’

2

তিনি বলেন, ‘শুধু হেলমেট নয়, কেউ যদি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালাতে চায় তাহলেও বাইক স্টার্ট নেবে না। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মোটরসাইকেল চালানো প্রতিহত করতে হেলমেটের সামনে একটি বায়ু সেন্সর বা ঘ্রাণ সংবেদনশীল সেন্সর ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালাতে পারবে না কেউ। প্রথম অবস্থায় স্টার্ট নিলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।’

রিয়াত জানান, এই সিস্টেম তৈরি করতে খরচ হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা। আর পুরো সিস্টেমটি তৈরিতে সময় লেগেছে তিন মাস। এটি তৈরিতে বিভাগের শিক্ষকদের কাছ থেকে সব ধরনের সহায়তাও পেয়েছেন বলে জানান।

এ সিস্টেমের উন্নয়নের জন্য এর সঙ্গে আরও একটি সেন্সর  ডিভাইস যুক্ত করার কাজ প্রায় শেষ দিকে বলে জানিয়েছে রিয়াত।

ইলেকট্রনিক্স বিভাগের বিভাগীয় প্রধান জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করা যাবে। সড়কে মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

পুলিশ কর্মকর্তাদের স্মার্ট বাইক সিস্টেম দেখাচ্ছেন রিয়াত

তিনি আরও জানান, ইন্সস্টিটিউট পর্যায়ের ‘স্কিলস কম্পিটিশন-২০১৭’ রিয়াতের উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’ প্রথম স্থান অধিকার করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে রিয়াত আগামীতে এই প্রযুক্তির উন্নয়নসহ আরও নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে পারবে।

কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলম বলেন, ‘আমরা রিয়াতের উদ্ভাবিত ‘স্মার্ট বাইক সিস্টেম’ প্রযুক্তিটি দেখেছি। ২৮ অক্টোবর কমিউনিটি পুলিশিং ডে-তে তার উদ্ভাবিত সিস্টেমের জন্য তাকে কৃতী শিক্ষার্থী সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমরা তার কাছ থেকে প্রজেক্টের ডিটেইল চেয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে এ সিস্টেমের ডিটেইল পাঠানো হবে। তারা এটি কার্যকর মনে করলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।’