নীলফামারীর সরমজানি ইউনিয়নের যাদুর হাট এলাকার রাস্তা পাগল এই ব্যক্তির নাম মনজিল হক (২৭)। গত ১০ বছর ধরে এভাবেই তিনি রাস্তার পর রাস্তায় কাজ করে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে। এ কারণে স্থানীয়দের কেউ তাকে ডাকে ‘মাটি পাগল মনজিল’, কেউ ‘ভাঙা পাগল মনজিল’। ‘সমাজসেবক মনজিল’ বলেও তাকে ডাকে অনেকেই।
যাদুর হাটের এই মনজিল হকের বাবা অচিউদ্দিন। জানা গেছে, চাপরা সরমজানি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন মনজিল। পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় এরপর আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি মনজিল। তবে শিক্ষকদের কাছ থেকে তিনি যে শিক্ষা পেয়েছিলেন, তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সমাজসেবায় উদ্বুদ্ধ হন। পরিবারের সদস্যদের কাছেও উৎসাহ পেয়েছেন তিনি। ফলে পেশা হিসেবে কোনও কাজকে বেছে না নিলেও পরিবারের সদস্যরা তার এই ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’র অভ্যাস নিয়ে কিছু না বলে বরং তার পাশেই দাঁড়িয়েছেন।
বন্যার পানিতে গ্রামের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় সেগুলো মেরামতের মাধ্যমে শুরু হয় মনজিলের সমাজসেবার উদ্যোগ। এরপর গত ১০ বছরে তার নিজের গ্রামসহ আশপাশের এলাকার যেকোনও জায়গাতেই রাস্তায় কোনও সমস্যা হলেই সেখানে দেখা গেছে মনজিলকে।
যাদুর হাট এলাকায় গিয়ে দেখা মেলে মনজিল হকের। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টাকা-পয়সা দিয়ে সমাজসেবা করেন অনেকেই। কিন্তু আমার তো আর টাকা-পয়সা নাই। তাই গায়ে খেটে মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। এভাবেই আমি মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই।’
স্থানীয়রা বলছেন, মনজিল তাদের সবার পরিচিত ও প্রিয় মুখ। শুধু স্থানীয়রাই নয়, আশপাশের এলাকার মানুষজনও মনজিলকে এক নামেই চেনেন। যেকোনও স্থানে তাকে দেখলেই সবাই দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করেন মনজিলের সঙ্গে।
স্থানীয়রা বলছেন, এলাকার লোকজন ছাড়াও পথচারীরা বলেন, মনজিলের মানুষের প্রতি ভালবাসা ও স্বেচ্ছাশ্রমের কাজ দীর্ঘ ১০ বছর থেকে দেখে আসছি। সে শুধু রাস্তার বাঁধ, ভেঙ্গে যাওয়া গর্ত সব সময় নিজের ইচ্ছায় সংস্কার করেন। মনজিলের জন্য গ্রামের অবহেলিত মেঠো পথগুলো চলাচলের জন্য সর্বদা উপযোগী থাকে। রাত পোহালেই ভাঙ্গা রাস্তা সংস্কারের কাজে বের হয়ে যায় মনজিল। তবে কাজের বিনিময়ে কারও কাছে টাকা-পয়সা নেন না।
নীলফামারী সদর উপজেলার চাপরা সরমজানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান খলিল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকায় মনজিল হকের কথা সবাই জানে। তিনি স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা মেরামত করার মাধ্যমে জনসাধারণের সেবা করেন। তার মতো আরও ১০ জন এভাবে সবার উপকারে এগিয়ে এলে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যেত। আশা করি, তার উদাহরণে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে। আমি তার মঙ্গল কামনা করি।’
পরিবার আর স্থানীয়দের উৎসাহ-অনুপ্রেরণায় মনজিল নিজেও চান যতদিন সম্ভব কাজ করে যেতে। তিনি বলেন, ‘আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামের আকাঁবাকাঁ রাস্তাগুলোর মাটি কেটে যেতে চাই।’