পঞ্চগড়ে স্কুল মাঠ দখল করে চলছে রাস্তা নির্মাণের কাজ

স্কুলোর মাঠে রাখা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ সামগ্রী

পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশি ইউনিয়নের ব্রহ্মত্তর কুমার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে চলছে রাস্তা নির্মাণের কাজ। পাকা সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত বিটুমিন মেসানোর মেশিনের কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি, মেশিনের শব্দ ও গরম বাতাসের কারণে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। যে কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। এসব কারণে বিদ্যালয়ের ১৫৭ জন শিক্ষার্থী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে শব্দ দূষণের কারণে দরজা বন্ধ করে তাদের পাঠদান করা হচ্ছে।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বিলুপ্ত ছিটমহলের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বোদা উপজেলার বড় শশী ইউনিয়নের দাঁড়িয়ার মোড় থেকে আউলিয়ার ঘাট পর্যন্ত একটি কালভার্ট নির্মাণসহ আড়াই কিলোমিটার সড়ক পাঁকাকরণের কাজ চলছে। মেসার্স সাইফুল আলম নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চুক্তি মূল্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ৪১ হাজার ৬৯১ টাকা ও প্রাককলিত মূল্য ১ কোটি ৮৯ লাখ ৪ হাজার ৭২৮ টাকায় কাজটি করছেন। কাজটি চলতি বছরের ২০ আগস্ট পর্যন্ত শেষ করার কথা রয়েছে। গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রহ্মত্তর কুমারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পাথর বালি ও ইটের খোয়া ফেলে কাজ শুরু করেছে। সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শুরুর পর গত সপ্তাহ থেকে বিটুমিন মেশানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।  এসময় ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সুবল, জয়া ও মহাদেব জানান,‘কালো ধোঁয়ার কারণে অনেক কষ্ট হয়। এ কারণে স্যার আমাদের দরজা বন্ধ করে ক্লাস নেন। পাথর বালি আর মেশিনের কারণে আমরা মাঠে খেলতে পারি না।’

চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র রিপন ও তাপস জানান, ‘ধোঁয়ার গন্ধে আমাদের অনেক কষ্ট হয়, মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করে কোনও কোনও সময় মাথা ঘুরে। চোখে মুখে ও চুলে ধুলার স্তর পড়ে।’

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুফিয়া আক্তার জানায়,‘শব্দ আর ধোঁয়ায় ক্লাস করতে পারি না, অনেক সমস্যা হয়, এজন্য মাঝে মাঝে স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যায়।’

এ ব্যাপারে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আব্দুর রহমান নয়ন জানান,‘এই এলাকায় তেমন কোনও ফাঁকা জায়গা নেই। তাই  কর্তৃপক্ষকে বলে স্কুল মাঠটি ব্যবহার করছি। তাছাড়া এটাতো সরকারি কাজ আর স্কুলটাও তো সরকারি।’

ব্রম্মত্তর কুমারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরেন চন্দ্র রায় জানান,‘রাস্তার আশপাশে ফাকা জায়গা না থাকায় ঠিকাদারের লোকজন আমাদের কাছে কিছু দিনের জন্য মাঠটি চেয়ে ছিলেন। আমরাও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে দিয়েছি তবে এতটা ক্ষতি হবে তা আগে বুঝতে পারিনি।’

পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ‘বিটুমিনের কালো ধোঁয়ায় কার্বনডাইঅক্সাইড থাকায় এটা খুবই ক্ষতিকর। এছাড়া বয়লারের শব্দ শব্দদূষণের অন্যতম কারণ। এর ফলে শিশুদের মাথা ঘোড়া, শ্বাসকষ্ট ও শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়াসহ নানা রোগ হতে পারে। বিশেষ করে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের চেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হওয়া এটা তাদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

পঞ্চগড় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্রই শুনেছি। আমি এখনই বোদা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’

আরও পড়ুন: ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১