বীজতলা তৈরিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাচা পদ্ধতি



মাচা পদ্ধতিতে তৈরি সবজীর বীজতলানীলফামারীতে শীতাকলীন সবজীর বীজতলা তৈরিতে মাচা পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাঁশের চাটাই ও পলিথিন দিয়ে এসব মাচা তৈরি করা হয়। তাই বৃষ্টিপাতে বীজতলার চারার কোনও ক্ষতি হয় না। পরে এসব চারা বিভিন্ন ক্ষেতে রোপন করা হয়। শীতঋতু আসতে এখনও প্রায় দেড় মাস বাকি থাকলেও জেলার বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি উঠতে শুরু করেছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে— বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, টমেটো, বেগুন, পালংশাক প্রভৃতি। মাচা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির মধ্যমে জেলার কৃষকরা আগাম এসব সবজি চাষ করেছেন। এ পদ্ধতিতে তৈরি বীজতলা থেকে উৎপন্ন চারা এখনও রোপন করছেন কৃষকরা। যেসব সবজি পৌষ বা মাঘ মাসে বাজারে উঠবে।

সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলার অধিকাংশ জমিতেই লাগানো আছে রোপা আমন। আর মাস খানেক পর শুরু হবে ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজ। তাই এখন চলছে অপেক্ষার পালা, তবে যেসব জমি উঁচু এবং আমন আবাদ সম্ভব হয়নি, সেগুলোতে লাগানো হচ্ছে নানা সবজী। এর মধ্যে রয়েছে পাতা কপি, ফুলকপি, মুলা, টমেটো, বেগুন, পালংশাকসহ বিভিন্ন জাতের মৌসুমি সবজি। মাচা পদ্ধতিতে এসব সবজীর বীজতলা প্রস্তুত করা হয়।

এবছর শ্রাবণে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল কম। কিন্তু ভাদ্রের শেষ দিকে এবং আশ্বিনের প্রথমে এ অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। আবহাওয়া অফিস সূত্র মতে, বর্ষা মৌসুমের একবারে শুরুতে বৃষ্টিপাতের গড় পরিমাণ ৫৪৮ মিলিমিটার থাকলেও পরে পুরো মৌসুমে বৃষ্টিপাত ছিল মাত্র প্রায় ৪৩৯ মিলিমিটার। তবে এরপরে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে যায় দ্বিগুণেরও বেশি। বর্ষা মৌসুমের পরে অসময়ে অতিবৃষ্টিপাতের ফলে জেলা সদরসহ ছয় উপজেলায় ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ও সৈয়দপুরে বন্যা দেখা দেয়। এতে আগাম শীতকালীন শাক-সবজীর বীজ বপন বাঁধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু কৃষক এজন্য বসে থাকেনি। বাঁশের মাচা বানিয়ে বীজতলা তৈরি করেছে। ওইসব বীজতলার চারা তুলে এখন লাগোনো হচ্ছে পানি শুকিয়ে গেছে এমন সব ক্ষেতে।

জেলার জলঢাকা উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের দুবাছড়ি গ্রামের কৃষক প্রদিপ কুমার রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাস্তার পাশে বাঁশের মাচা বানিয়ে ফুল কপির বীজতলা তৈরি করেছি। আমার জমিতে পানি জমে থাকায় ১০ ফুট লম্বা ও চার ফুট চওড়া ওই মাচায় এক গ্রাম বীজ বপন করি। এভাবে তিনটি বীজতলা তৈরি করি। ফুল কপির তৈরি ওইসব বীজতলার একেকটি থেকে ২২ শতক করে জমিতে চারা লাগানো যাবে। ’

সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক তসলিম উদ্দিনও বলেন একই কথা। নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশের মাচা তৈরি করে পলিথিনের ছই বা টোপর বানিয়ে সবজির বীজতলা তৈরি করেন তিনি। বৃষ্টি হলে সেটি ঢেকে দেওয়া এবং প্রয়োজন মতো তা তুলে ফেলা হয়।

তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে বীজতলা থেকে ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা তুলে ক্ষেতে লাগাতে হয়। কপি ফলবে ৫৫ দিনের মধ্যে। কিন্তু আগের মতো সাধারণভাবে বীজতলা তৈরি করা হলে তাতে কপি ফলতে সময় লাগতো ৬৫ থেকে ৭০ দিন। মাচায় বীজতলা তৈরি এ অঞ্চলে একেবারে নতুন। এখনও সেভাবে প্রচার লাভ করেনি।’

তবে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলায় ব্যাপকভাবে মাচা পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে ওই এলাকায় আগাম সবজি চাষ এগিয়ে যাচ্ছে।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কৃষক এখন অনেক সচেতন হয়েছে। মাচা পদ্ধতি তারা নিজেরাই উদ্ভাবন করেছেন। সেখানে তারা বীজতলা তৈরি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে বীজতলার চারা নষ্ট হয় না। এ নতুন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করছে জেলা সদরসহ ছয় উপজেলার কৃষকরা।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছর এ জেলায় শীতকালীন সবজী আবাদ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমিতে এবং ফলন মিলেছিল ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৫ মেট্রিক টন। এ অর্থবছরে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৪৫ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষি বিভাগ। এ যাবত অর্জিত হয়েছে এক হাজার ১৫ হেক্টর।